মোস্তাফিজুর রহমান, গাইবান্ধা (সাঘাটা, ফুলছড়ি):
গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী হিন্দু তীর্থস্থান ভরতখালী কাষ্ঠ কালি মন্দিরে চলছে বৈশাখ মাসব্যাপী পূজা ও মনোবাসনা পূরণের মেলা। প্রতিবছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে এই পুণ্যতীর্থে হাজারো ভক্তের আগমন এবং নানান আয়োজনে মুখরিত হয়ে উঠেছে মন্দির এলাকা।
গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভক্ত-পুণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখর ভরতখালী কাষ্ঠ কালি মন্দির প্রাঙ্গণ। প্রতি বৈশাখ মাসের প্রথম শনিবার ও মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে মাসজুড়ে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার চলে পূজা-অর্চনা ও মেলা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবী কালি মায়ের কাছে বলিদান ও পূজা অর্চনা করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
প্রায় ৩০০ বছর আগে যমুনা নদী থেকে ভেসে আসা এক কাঠখণ্ডের অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা কিংবদন্তি। স্থানীয়রা জানান, তৎকালীন জমিদার রমনী কান্ত রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাঠখণ্ডটি পূজা করেন এবং সেখান থেকেই এটি কালি মূর্তিতে পরিণত হয়।
ভক্তদের মধ্যে কেউ রোগমুক্তি, কেউ বিপদ থেকে রক্ষার জন্য, আবার কেউ সন্তানের জন্য মানত করে এই মন্দিরে আসেন। ভক্তরা মোমবাতি, আগরবাতি ও ধূপ জ্বালিয়ে দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন এবং প্রার্থনার শেষে ভোগ নিবেদন করেন। অনেকেই পাঠা বলিও দেন।

মন্দিরের পাশে পাকুর তলার বিস্তৃত প্রায় ৭ একর এলাকা জুড়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা। মেলায় রয়েছে বাহারি খাবার, দই, বাতাসা, সন্দেশ, বাঁশ ও মাটির তৈজসপত্র, খেলনা, হাতপাখা ও নানা হস্তশিল্প। এতে যোগ দিয়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থী।
শ্রী মতিলাল জানান, “আমি মায়ের আগেও অনেক মানত করেছি পূর্ণ হয়েছে তাই আবারো এই মায়ের মন্দিরে ছুটে আসছি। এটা খুব জাগ্রত মন্দির।”
বগুড়া থেকে আসা মিনা সাহা বলেন, অনেক ভালো লাগলো মায়ের পূজা দেখলাম এই নিয়ে তিন বার আসার, যে যার যার মনের আশা এখানে এসে মায়ের কাছে যা প্রার্থনা করেলে, তা পূর্ণ হয়েছে।”
মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী রনজিৎ কুমার চন্দ্র বলেন, “আমি দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করছি। আশাকরি, সুষ্ঠুভাবে মেলা চলবে এবং ভক্তদের উপস্থিতি আরও বাড়বে।”
মেলায় আগত হাজারো মানুষের নিরাপত্তায় মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সার্বিকভাবে মেলার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল।