ফ্রান্সজুড়ে একের পর এক কারাগারে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ চরমে পৌঁছেছে। সোমবার রাতে দেশের অন্তত সাতটি কারাগারে একযোগে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং তুলোন শহরের একটি কারাগারে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে, যেটিকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ধরমানাঁ “সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। প্রশাসনের ধারণা, সরকারের মাদকবিরোধী অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় এই সংঘবদ্ধ হামলাগুলো সংঘটিত হয়েছে এবং ঘটনাগুলোতে মাদক চক্রের জড়িত থাকার বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই তদন্ত চলছে।
প্রাথমিকভাবে যেসব শহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে রয়েছে তুলোন, এক্স-আঁ-প্রোভঁস, মার্সেই, নীম, ভালঁস, ভিলেপান্ত ও নঁতের। বেশ কয়েকটি কারাগারে কারা কর্মীদের ব্যক্তিগত গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তুলোনের ‘লা ফার্লেদে’ কারাগারে হামলাকারীরা ক্যালাশনিকভ রাইফেল দিয়ে গেটে গুলি চালায়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কর্মীদের মধ্যে। ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার, কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী জানান, জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী প্রসিকিউটরের দপ্তর ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। তিনি বলেন, এই ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয় এবং এগুলো পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার অংশ।
মন্ত্রী ধরমানাঁ বলেন, “আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে এগুলো মাদকবিরোধী অভিযানের প্রতিক্রিয়া। সরকারের কড়া অবস্থান অপরাধীদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। ফ্রান্সে বহু বছর ধরে যেসব মাফিয়াচক্র গড়ে উঠেছিল, এবার আমরা তাদের শেকড় উপড়ে ফেলছি।” তিনি আরও জানান, “এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারা চালাচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা ও পুলিশ বিভাগ একযোগে কাজ করছে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের হাতে এসেছে।”
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেটাইয়ো বলেন, “যারা কারাগারে হামলা চালায়, তাদের স্থান সেই কারাগারেই হওয়া উচিত।” তিনি জানান, তিনি পুলিশ বিভাগকে কারাগারগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই বিষয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ হবে “নির্মম ও অটল”।
কারাগার কর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী দুটি প্রধান ইউনিয়ন, FO Justice এবং Ufap-Unsa Justice, এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। FO Justice জানিয়েছে, হামলাগুলো ছিল “অত্যন্ত গুরুতর” এবং কারা কর্মীদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। তারা সরকারের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে, Ufap-Unsa Justice বলছে, “প্রতিটি কারাগারে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দেওয়ার মতো জনবল নেই।”
একাধিক জায়গায় হামলাকারীরা কেবল কারাগার নয়, বরং কারা কর্মীদের আবাসস্থল এবং যানবাহনকে লক্ষ্য করেছে। মার্সেই শহরে কারা কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবনে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা হয়। নঁতেরে একজন কারা কর্মীকে তাঁর বাসায় গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এসব ঘটনা প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট বার্তা—এটি শুধু প্রতিষ্ঠানকে নয়, বরং প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত জীবনেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
হামলার পর তদন্তে উঠে এসেছে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। একাধিক গাড়িতে লেখা পাওয়া গেছে “DDPF”—যার পূর্ণরূপ, Droits Des Prisonniers Français বা “ফরাসি বন্দিদের অধিকার”। কিছু কিছু স্থানে নৈরাজ্যবাদী স্লোগানও পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে আদর্শগত সহানুভূতি বা সমর্থন থাকতে পারে। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, “এই হামলাগুলো ছিল সমন্বিত এবং সরকার যে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর কৌশল নিয়েছে, তা প্রতিহত করতেই সংঘটিত।”
সরকারের মতে, ফ্রান্সে মাদক সংক্রান্ত অপরাধ বর্তমানে বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে রেকর্ড পরিমাণ—৫৩.৫ টন—কোকেইন জব্দ করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেশি। মন্ত্রী রেটাইয়ো এই চিত্রকে “সাদা সুনামি” বলে বর্ণনা করেন।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। মন্ত্রী ধরমানাঁ প্রস্তাব দিয়েছেন, একটি নতুন ধরণের উচ্চ-নিরাপত্তা কারাগার গড়ে তোলা হবে যেখানে মাদকচক্রের নেতৃত্বে থাকা অপরাধীদের একান্ত পৃথক অবস্থানে রাখা যাবে, যাতে তারা কারাগার থেকেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে না পারে। পাশাপাশি, একটি নতুন আইন পাসের পথে রয়েছে, যেখানে মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য একটি বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগ, বিচারিক তদন্তের গতি বাড়ানো এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর ক্ষমতা থাকবে।
সরকারি কর্মকর্তারা যেমন বলছেন, এসব হামলা রাষ্ট্রের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হচ্ছে যে সরকার এবার অপরাধীদের ছাড় দেবে না। তবে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে শুধু আইন দিয়ে নয়, একে মোকাবেলা করতে হবে কৌশলগত, সাংগঠনিক এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে। অপরাধীরা যদি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের প্রতীক—কারাগার ও কর্মীদের—এইভাবে নিশানা করতে পারে, তবে এটি শুধুই আইন-শৃঙ্খলার নয়, রাষ্ট্রের সার্বভৌমতার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
এই সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার কতটা কার্যকর হয় এবং ফ্রান্স কতটা দ্রুত তার রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নিরাপদ করতে পারে—তা নির্ভর করছে আসন্ন কয়েক সপ্তাহের উপর। একইসাথে এটাও দেখার বিষয় যে, অপরাধীরা সরকারের কঠোর অবস্থানে মাথা নোয়াবে, না কি আরও সহিংসতায় জবাব দেবে।
চাইলে আমি এই প্রতিবেদনকে আরও ভেঙে বিশেষ অংশে সাজিয়ে দিতেও পারি—যেমন, ব্যাকগ্রাউন্ড, তদন্তের তথ্য, সরকারের পরিকল্পনা, কারা কর্মীদের বক্তব্য ইত্যাদি। বলো কীভাবে সাজাতে চাও।