হুমায়ন কবির মিরাজ: যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় গো-খাদ্যে ভয়াবহ ভেজালের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় একটি চক্র নিম্নমানের ভূসি, ধানের কুড়া, তুষ ও নিম্নমানের আটা মিশিয়ে তা বসুন্ধরা কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করছে। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন খামারিরা, আর চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গবাদিপশুর স্বাস্থ্য। এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাগআঁচড়ার কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠে আসছিল। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাগআঁচড়া ময়ূরী সিনেমা হলের উত্তর পাশে আনছার আলীর একটি ভবনে দিনের বেলা প্রকাশ্যে নিম্নমানের ভূসির সঙ্গে ধানের কুড়া ও আটা মিশিয়ে বসুন্ধরা কোম্পানির ভূসির নামে বাজারজাত করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এসব ভূসি প্রথমে নিম্নমানের উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়, এরপর বসুন্ধরা কোম্পানির খালি বস্তায় তা ভরে নতুন করে মেশিনের সাহায্যে মুখ সেলাই করে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করা হয়। মূলত, খামারিরা বসুন্ধরা কোম্পানির ভূসির প্রতি বেশি আস্থাশীল হওয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে এই ভেজাল পণ্য তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রতারণার মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে বাগআঁচড়া বাজারের শামীম ট্রেডার্সের মালিক শামীম হোসেনের নাম। তিনি স্বীকার করেছেন যে, এই ব্যবসায় তিনি একা নন; আরও ৫-৬ জন ব্যবসায়ী এ কাজে জড়িত।
শামীম হোসেন জানান, শংকরপুর রোডের ঠাকুর ঘরের পাশে একটি দোকানের পেছনেও একই ধরনের কাজ চলছে। এছাড়া বাজারের ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম, বাবু চেয়ারম্যান মার্কেটের ভেতরে ও বাজারের আরও কয়েকটি পয়েন্টে একই ধরনের প্রতারণা চালানো হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “শুধু আমাকেই দোষারোপ করা ঠিক না, আরও অনেকেই এই কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তপু কুমার সাহা জানান, “গো-খাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিষয়টি গুরুতর অপরাধ। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাজিব হাসান বলেন, “গো-খাদ্যে ভেজাল মেশানো গুরুতর অপরাধ। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খামারিরা বলছেন, নিম্নমানের ভূসি খাইয়ে গরু ও মহিষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। এতে দুধ ও মাংস উৎপাদনেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এ ধরনের প্রতারণা আরও ছড়িয়ে পড়বে, যা কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।