সার্বিয়া বর্তমানে গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একদিকে সার্বিয়াকে সদস্যপদ প্রার্থী হিসেবে সমর্থন জানিয়ে আসছে, অন্যদিকে দেশটির আইন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাসের কারণে উদ্বিগ্ন।
নভি সাদ শহরের একটি রেলওয়ে স্টেশনে আশ্রয় কেন্দ্র ধসে পড়ায় ১৫ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই সার্বিয়ায় বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। আন্দোলনকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ আনছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী মিলোশ ভুচেভিচ পদত্যাগ করেছেন, তবুও এই আন্দোলন থেমে নেই বরং আরও ২০০টিরও বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।
ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন
এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে ছাত্ররা, যারা কম দুর্নীতি এবং আরও গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার, ভ্রাতৃত্ব ও দায়বদ্ধতার দাবি জানাচ্ছে। তারা দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি গভীর অনাস্থা প্রকাশ করছে। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচ এই আন্দোলনকে “বিপ্লবের প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন যে বিদেশি শক্তিগুলো তার সরকারকে পতনের চেষ্টা করছে। তবে ইউরোপীয় কমিশন এখন পর্যন্ত কেবল “আইনের শাসন ও সমাবেশের স্বাধীনতা” সমর্থনের কথা বলেছে।
ইইউর অবস্থান ও সার্বিয়ার ভবিষ্যৎ
সার্বিয়া ২০১২ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ প্রার্থী হিসেবে রয়েছে এবং ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের আলোচনা শুরু হয়। ইইউ ইতোমধ্যেই দেশটিতে বিনিয়োগকারী, আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী এবং বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে গণতান্ত্রিক সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে দেশটির ইইউ সদস্যপদ পাওয়া আরও পিছিয়ে যেতে পারে।
ছাত্রদের বক্তব্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নিস শহরে এক বিশাল বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২০ বছর বয়সী ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী লেনা বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি অনেকেই এখন আর বিশ্বাস রাখে না। আমি আশা করি দ্রুত পরিবর্তন আসবে, না হলে আমরা ধীরে ধীরে গণতন্ত্র থেকে আরও দূরে সরে যাব।”
তার বন্ধু স্তাশা বলেন, “আমাদের কঠোর পরিশ্রমের মূল্যায়ন চাই, রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে নয়, আমাদের কর্মের ভিত্তিতে বিচার হওয়া উচিত।”
তারুণ্যের ইউরোপ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি
সার্বিয়ার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ দ্রাগানা জুরিকা জানান, “৪৫-৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে ইইউর প্রতি সমর্থন বেশি, কারণ তারা ৯০-এর দশকের বিচ্ছিন্নতা ও সংকটের সময়কাল স্মরণ করে। কিন্তু তরুণদের মধ্যে ইউরোস্কেপটিসিজম (ইইউ সম্পর্কে সংশয়) বাড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইইউ যদি শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক বিনিয়োগ বাড়ায় এবং সঠিকভাবে তাদের মূল্যবোধ তরুণদের কাছে পৌঁছে দেয়, তবে সার্বিয়ার যুবসমাজ আরও ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করতে পারে।”
সার্বিয়ার যুবসমাজ ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না দেশ “একটি সত্যিকারের জ্ঞান ও পরিশ্রমকে মূল্যায়নকারী সিস্টেম” প্রতিষ্ঠা করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংকট সার্বিয়ার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।