আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রায় দুই বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সুদানের সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুমের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ পুনর্দখল করেছে। দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) এর কাছ থেকে এই ঐতিহাসিক স্থাপনা পুনর্দখলের ঘটনাকে বিশাল এক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত কয়েক মাস ধরে সুদানের সেনাবাহিনী RSF-এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সফল অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তবে এই লড়াই এখনই শেষ হয়ে যায়নি। দেশের বহু অঞ্চল এখনও RSF-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, বিশেষ করে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে তাদের অবস্থান বেশ শক্তিশালী।
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ পুনর্দখলের পর সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নবিল আবদাল্লাহ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন:
“আমাদের বাহিনী শত্রুপক্ষকে সম্পূর্ণ পরাজিত করেছে, তাদের যুদ্ধ সরঞ্জাম ধ্বংস করেছে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দখল করেছে।”
RSF-এর প্রতিক্রিয়া ও যুদ্ধের ভবিষ্যৎ
RSF-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের যোদ্ধারা এখনও এলাকায় উপস্থিত রয়েছে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে,
“আমাদের বীর যোদ্ধারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশে এখনো অবস্থান করছে এবং পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।”
RSF দাবি করেছে যে, তাদের ড্রোন হামলায় সুদানের সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় টিভির সাংবাদিক এবং দুইজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন।
RSF প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো (হেমেদতি) এক ভিডিও বার্তায় ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও আশপাশের এলাকাগুলো রক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।
রাজধানী খার্তুমের সাধারণ মানুষের জন্য গত দুই বছর ছিল এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। RSF বাহিনী শহরের বিভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ করছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে লুটপাট, হত্যা, নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ পুনর্দখলের পর অনেক বাসিন্দা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন,
“আমরা দীর্ঘদিন পর স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি। অবশেষে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারব।”
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সেনাবাহিনী ও RSF-এর মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ১২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জাতিসংঘ বলছে, এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট।
- দারফুর, মধ্য সুদান ও উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ অঞ্চল এখনও RSF-এর দখলে।
- দুর্ভিক্ষের কারণে লাখো মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
- প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, অনেকে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনা ব্যর্থ
সুদানে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে। তবে সেনাবাহিনী ও RSF বারবার এসব আলোচনাকে ব্যর্থ করেছে এবং উভয় পক্ষই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সুদানের সেনাবাহিনী শুধু রাজধানী খার্তুমেই নয়, দেশের মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও RSF-এর কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিজয় যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, বরং এটি আরও সহিংসতা উসকে দিতে পারে। কারণ RSF এখনও সুদানের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
সুদানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ পুনর্দখল সেনাবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হলেও দেশের সংকট এখনও বহুদূর। যুদ্ধ চলতে থাকলে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে এবং লাখো মানুষ আরও দুর্ভোগের শিকার হবে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের এখনই উচিত সুদানের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ নেওয়া এবং শান্তি আলোচনাকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করা। অন্যথায়, এই যুদ্ধ সুদানকে আরও দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেবে।