সিলেট ব্যুরো:- গতকাল মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতে ঘোষিত হয় সিলেটের ৬ টি থানার জাতীয়তাবাদী সেচ্ছাসেবকদলের কমিটি। জাতীয়তাবাদী সেচ্ছাসেবক দলের সিলেট মহানগরের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফসর খান স্বাক্ষরিত কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর পরই শুরু হয় মিছিল, সভা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নেতিবাচক পোষ্ট যা ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদ হাসিনার আমলে মামলা হামলার স্বীকার নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। কমিটি বাতিলের দাবীতে সিলেট শাহপরান গেইট এলাকায় পদ বঞ্চিত নেতারা ঝাড়ু মিছিল করে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামও দেন। তারা অভিযোগ তুলেন স্হানীয় নেতৃবৃন্দ দল নিয়ে বানিজ্য করছেন।

টাকার বিনিময়ে পতিত সরকারের ধোসরদের সেচ্ছাসেবকদলে পদ পদবী দেয়া হয়েছে। এমতাবস্হায় দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন। এর আগেও সিলেট মহানগর ও জেলা যুবদলের কমিটি নিয়েও পক্ষে বিপক্ষে মিছিল হয়েছে। সেখানেও আওয়ামী ধোসরদের পদ পদবী দেয়া হয় আর ত্যাগীদের অবমুল্যায়ন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। গতকালের সেচ্ছাসেবকদলের ৬টি থানা কমিটির মধ্যে সব চেয়ে বেশী বিতর্কিত হচ্ছে সিলেট শাহপরান থানা কমিটি। এ কমিটিতে দেখা গেছে গত ৪ আগষ্ট ছাত্র জনতার উপর হামলাকারি যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ক্যাডাররা স্হান পেয়েছে। আশ্চর্য্যের বিষয় শাহপরান থানা কমিটির আহবায়ক পদটি দেয়া হয়েছে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ক্যাডার ও তার আত্বীয় নুরুল হক মাসুমকে। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয়েছে আভ্যন্তরিন কোন্দল যা হয়ত এক সময় প্রকাশ্যে বিস্তার লাভ করতে পারে। বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, বিএনপির ভিতর কোন্দল সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্য নিয়েই আওয়ামীলীগের ধোসররা তাদের নেতা কর্মীদের বিএনপির অঙ্গসংগঠনের ভিতর ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

খোলাসা করে বলতে গেলে, এসব দালালদের জন্য ত্যাগী নেতারা দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়লেই আওয়ামিলীগের মিশন সাকসেস।
এদিকে পদ বঞ্চিত, ত্যাগী, হামলা মামলার শিকার নেতা কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ। সুত্র বলছে যে কোন সময় ঘটতে পারে সহিংসতা। কারন দীর্ঘ ১৬ বছর হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যেসব নেতা কর্মীরা জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন তারাই আজ পদ বঞ্চিত হচ্ছেন। অপর দিকে আওয়ামী ধোসররদের পদ পদবী দিয়ে দলে ঢুকানো হচ্ছে।
এসব ত্যাগী নেতাদের কান্নার আওয়াজ শুধু তাদের দীর্ঘদিনের সাথী ছাড়া কেউই দেখছেনা। তেমনই এক নেতা সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য সাইদুল এনাম চৌধুরী লাহিন পদ বঞ্চিত নেতাদের দুঃখে দঃখি হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। মঙ্গলবার (১৮মার্চ) ভোরে তিনি তার ফেসবুকে খোলা চিঠি পোষ্ট দেন। লাহিনের খোলা চিঠি পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হল:-
“জনাব তারেক রহমান
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপি)
প্রিয় নেতা আপনি কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। প্রিয় অবিভাবক আমরা কিন্তু ভালো নেই। আমরা আজ কর্মীদের কাছে লজ্জিত। আপনার দেওয়া কথা আমরা কর্মীদের মাঝে প্রচার করেই আমরা এই ছেলে গুলোকে রাজপথে উজ্জীবিত রেখেছিলাম। আপনিতো বলেছিলেন যে ছেলে গুলো রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখবে তার চেহারা কালো না ফর্সা ধনী না গরীব সেই পরিচয় দেখা হবে না।তাদেরকে তাদের যায়গায় মূল্যায়ন করা হবে। দেওয়া হবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয়। আমি ধীরচিত্তে বলতে চাই আমার বিশ্বাস আপনার কথা এবং কাজের মধ্যে কোন হেরফের নাই। কিন্তু আমাদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কেন যে তা কর্নপাত করছেন না তা আমার বোধগম্য নয়। লিডার আমাদের প্রকৃত কর্মীদের চেহারা বেশ একটা ভালো নেই। এদের পকেটের পরিস্থিতি ও ভালো নেই।
দীর্ঘ ১৭ বছর এই ছেলেগুলো বৃষ্টিতে ভিজে রুদ্রে শুকিয়ে অনেক আন্দোলন করেছে। তীব্র গরমে পিচঢালা রাজপথে অনেক মিছিল করেছে। তাই এদের চেহারার অবস্থা মোটেই ভালো নেই। পুলিশের ভয় ও গ্রেফতার আতংকে রাতের পর রাত পালাতক জীবন যাপন করেছে। আজ অনেক কষ্ট হয় যখন দেখি সেই ছেলে গুলোকে অবমূল্যায়ন করে এতদিন যারা আওয়ামিলীগের সাথে আঁতাত করে নিরাপদে ছিল এবং ব্যবসা বানিজ্য করেছে তাদেরকে দিয়ে কমিটি হয় তখন আমরা নিজেকে অপরাধী মনে করি। প্রিয় অবিভাবক এই বিষয়গুলো দ্রুত আমলে নিয়ে আপনার প্রতি কর্মী গুলোর আস্থা এবং বিশ্বাসের বন্ধন আরও শক্তিশালী করবেন বলে আমি আশা প্রকাশ করছি। এই কর্মী গুলোর যত্ন নিলে দল আরও শক্তিশালী হবে এটাই আমার ধারণা। প্রিয় অবিভাবক আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার কোন মাধ্যম আমার মত কর্মীর নাই।তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার মনের কথাগুলো প্রকাশ করার জন্য আন্তরিক দুঃখিত। ভুলভ্রান্তি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ইতি
আপনার এক নগন্য কর্মী
সাইদুল এনাম চৌধুরী লাহিন
আহবায়ক কমিটির
সদস্য সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল।