যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল গাজার ফিলিস্তিনিদের পূর্ব আফ্রিকার তিন দেশ—সুদান, সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডে জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে। এ সংক্রান্ত কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
গোপন আলোচনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
শুক্রবার (১৪ মার্চ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের ধারণা উত্থাপন করেন। এরপর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং এটিকে জাতিগত নির্মূল (Ethnic Cleansing) হিসেবে আখ্যায়িত করে।
এপি জানায়, সুদানের কর্মকর্তারা স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ পাননি।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা
মার্কিন ও ইসরাইলি কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে গোপন আলোচনা হয়েছে। একইভাবে সুদানের সাথেও যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন কূটনৈতিক সূত্র। তবে আলোচনার অগ্রগতি কতদূর হয়েছে বা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। এরপরই গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সক্রিয় হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল এই আলোচনায় মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে।
ইসরাইলের অভিবাসন পরিকল্পনা
ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায়’ অভিবাসনের দীর্ঘদিনের সমর্থক ইসরাইলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, “ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুক দেশগুলোর সন্ধানে কাজ করছে ইসরাইল।”
এছাড়া ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বড় অভিবাসন বিভাগও প্রস্তুত করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, আরব দেশগুলো এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের এ পরিকল্পনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে নিন্দা জানিয়েছে। অনেকেই এটিকে একটি পরিকল্পিত ‘জাতিগত নির্মূল’ হিসেবে দেখছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়নযোগ্য হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।