সলিম আহমদ সলু (সিলেট) ব্যুরো:- সিলেট নগর জুড়ে যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন নগরীর প্রধান সড়ক ও পাড়া মহল্লাগুলোতে যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন জনসাধারণ। এর কারণ হিসেবে সচেতন ব্যক্তিবর্গ দায়ী করছেন, সড়কে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত রিকসা ও অটোরিকসা ইজিবাইক চলাচল এবং ফুটপাত দখলকে।

এছাড়া সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে ট্রাফিক পুলিশের কঠোর নজরদারির দাবিও জানান তাঁরা। নগরীর বন্দর, জেলরোড, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার, নাইওরপুল, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, মেজরটিলা, আম্বরখানা, উপশহর পয়েন্ট, সোবহানীঘাট, জল্লারপার রোড, জিন্দাবাজার, লামাবাজার, মির্জাজাঙ্গাল, চৌহাট্টা, দরগা গেইট, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, সুরমা মার্কেটের সামন, কদমতলীহ বেশ কয়েকটি স্হানে প্রতিদিন নিয়মিত যানজট লেগে থাকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। যানজটের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি সেবার গাড়িগুলোও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে চলছে রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য। অন্যদিকে যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং করে যাত্রী ওঠা-নামা করানোর কারণে সড়কের প্রতিটি মোড়েই এক ধরনের বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে।নগরীর যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দিন-দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা সচেতন নগরবাসীর।
যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত নগরায়ন, প্রশস্ত সড়কের অপ্রতুলতা, অবৈধ পার্কিং, অবৈধ ষ্ট্যান্ড, মাত্রাতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত রিকসা, অটোরিকসা ইজিবাইক, ফুটপাত দখল এবং ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, নগরীর বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। ফলে পথচারীদের চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে আসছে। এছাড়া শহরে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত রিকসা ও ইজিবাইক চলাচলের কারণে যানজট নিয়মিত লেগেই থাকে। যানজট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, সড়কের প্রশস্ততা বৃদ্ধি, অবৈধ পার্কিং ও অবৈধ ষ্ট্যান্ড উচ্ছেদ, ফুটপাত দখলমুক্তকরণ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা জরুরি। এছাড়া গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেও যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা। সচেতনমহল বলছে, সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকসা ও অটোরিকসা ইজিবাইক অতিরিক্ত থাকায় বাড়ছে যানজট এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা এখন খুবই জরুরি। এর পরিমাণ আরও বেড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে।
মিরাবাজারের গৃহিনী সামসুন্নাহার বলেন, সড়কের যেদিকেই তাকাই শুধু রিকসা আর রিকসা চোখে পড়ে। এতোগুলা রিকসা চলাচল করলে তো যানজট থাকবেই। ২-৩ বছর আগে তো এতো রিকসা ছিলো না, তখন যানজটও ছিল না। ছোট্ট একটি নগরীতে হাজার-হাজার ব্যাটারিচালিত রিকসার কি প্রয়োজন ছিল। সীমিত সংখ্যক রিকসার অনুমোদন দিলে এই সমস্যা হতো না।
জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম বলেন, ঢাকা শহরের মতো সিলেট নগরীও এখন যানজট লেগেই থাকে। হাত বাড়ালেই শত-শত ব্যাটারি চালিত রিকসা মিলে। আর বেশিরভাগ রিকসা চালক অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক। যার কারণে একদিকে যেমন তারা যানজট সৃষ্টি করেন, অন্যদিকে দুুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। যানজট নিরশনে নগর কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এসব যানবাহনের ব্যাপারে নিয়ম চালু করতে হব।
নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী বদরুল ইসলাম বলেন, রমজান মাসে যানজট বেশি হলে মানুষের কষ্ট হয়। আমরাও চাই যানজট মুক্ত থাকুক সিলেট নগর। তিনি বলেন, আমি শুনলাম নগর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল যেন ব্যাটারিচালিত রিকসা চলাচলে সঠিক নিয়ম চালু করা হয়। কিন্তু নগর কর্তৃপক্ষ এসব অনুরোধ না রেখে নতুন করে অনেক ব্যাটারিচালিত রিকসা ও অটোরিকসা ইজিবাইকের অনুমোদন দিচ্ছেন। সিলেট নগরে যানজটের মূল কারণ হিসেবে তিনি মাত্রাতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত রিকসা ও অটোরিকসা ইজিবাইককে দায়ী করেন।