সউদ আব্দুল্লাহ
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ
একজন চাষির স্বপ্ন নিমেষেই ধ্বংস হয়ে গেল নিষ্ঠুর প্রতিশোধের বিষে! জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার চক নয়াপাড়া গ্রামে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এক চাষির স্বপ্নের পুকুরে বিষ ঢেলে হত্যা করা হলো লাখ টাকার মাছ! এই নির্মম ঘটনার শিকার হয়েছেন স্থানীয় চাষি আজিজুল হক লেফু।

রবিবার দিবাগত গভীর রাতে ভয়াবহ এই নৃশংসতার শিকার হয় আজিজুল হকের ৫০ শতাংশ জলকরের পুকুর। তার অভিযোগ, প্রতিবেশী মৃত মোফাজ্জল হোসেনের দুই ছেলে ছানাউল হক ও তাজমুল হক পরিকল্পিতভাবে তার পুকুরে বিষ ঢেলে দিয়েছেন। এতে মুহূর্তেই ধুঁকে ধুঁকে মরতে শুরু করে তার পোনা থেকে বড় হওয়া রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন জাতের মাছ।
ভোরবেলা সেহরির পর চাষির ছেলে সোহেল যখন পুকুরপাড়ে যান, তখন তিনি চক্ষুচড়কগাছ হয়ে যান! পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ছানাউল ও তাজমুলকে দেখে ফেলেন তিনি। তারা হাতে থাকা কিছু একটা পানিতে ফেলেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাছগুলো অস্বাভাবিকভাবে লাফাতে শুরু করে। সময় গড়াতেই পানির উপর ভেসে ওঠে হাজার হাজার মৃত মাছ স্বপ্নের মৃত্যু, জীবিকার মৃত্যু!
আজিজুল হক লেফু জানান, তিনি তার পুকুরে লাখ টাকার মাছ চাষ করেছিলেন। শুধু পোনা কেনাই নয়, মাছের খাবার ও ওষুধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল প্রায় দুই লাখ টাকা। বর্তমানে মাছগুলোর ওজন ছিল ৫০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজির মধ্যে। সব মিলিয়ে বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। অথচ এক রাতের মধ্যেই সব শেষ!
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “বিরোধ তো ছিল রাস্তা নিয়ে,তাহলে আমার নিরীহ মাছগুলো কী দোষ করেছিল? বিনা অপরাধে কেন আমার স্বপ্নটাকে ধ্বংস করা হলো? আমি এর বিচার চাই!”
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, আজিজুল হকের সঙ্গে অভিযুক্ত দুই ভাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি মীমাংসার জন্য থানায় শালিসও হয়েছিল, কিন্তু তারপর থেকে বিরোধ আরও প্রকট হয়। তিনি বলেন, যে নিষ্ঠুরভাবে এই অপকর্ম ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
অন্যদিকে অভিযুক্ত তাজমুল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, রাস্তা নিয়ে বিরোধ আছে ঠিক, কিন্তু আমরা মাছের পুকুরে বিষ দেইনি। আমাদের ফাঁসানোর জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মহতামিম। তিনি নিশ্চিত করেন, এটি পরিকল্পিত ভাবেই বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের ঘটনা।”
অন্যদিকে কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন জানান,এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি,তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।