গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে রাগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় উপজেলার বরমী ইউনিয়নের দরগাচালা গ্রামের শালবনের ভেতর থেকে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে (৮) উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে ধর্ষণ করে সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবক আরমান মিয়ার (২৭) বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলেই আরমান মিয়াকে গণপিটুনি দেওয়া হয় এবং পরে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
ঘটনার বিস্তারিত
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে স্থানীয়রা বনের ভেতর থেকে একটি শিশুর চিৎকার শুনতে পায়। এগিয়ে গিয়ে তারা দেখতে পায়, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা ধর্ষক আরমান মিয়াকে আটক করে এবং তাকে মারধর শুরু করে। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ধর্ষক আরমান মিয়া ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের শামসুল হকের ছেলে। তিনি গত কয়েক বছর ধরে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের দরগাচালা (মাঝেরটেক) গ্রামের বন বিভাগের জমিতে কুঁড়েঘরে বসবাস করছেন এবং দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজ করেন।
শিশুটির অবস্থা
নির্যাতনের শিকার শিশুটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। শিশুটি জানায়, আরমান মিয়া তাকে ধর্ষণ করে সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেছে। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির বাবা জানান, দুপুর থেকেই তার মেয়েকে বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। সন্ধ্যায় বনের ভেতর চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে আরমান মিয়াকে বনের ভেতর থেকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
ধর্ষকের স্বীকারোক্তি
স্থানীয়দের গণপিটুনির পর আরমান মিয়া তার অপরাধ স্বীকার করে। সে জানায়, সে ইয়াবা সেবন করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আরমান আরও স্বীকার করে যে, সে ধর্ষণের দৃশ্য ধারণ করে তার তিন বন্ধুর মোবাইলে পাঠিয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য
শ্রীপুর থানার ওসি (তদন্ত) শামীম আখতার বলেন, ধর্ষক আরমান মিয়াকে পুলিশি হেফাজতে আনা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরমান শিশুটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। সে ইয়াবা সেবন করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ ও রাগ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেন, ধর্ষকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অনেকেই বলছেন, শিশু নির্যাতনের মতো জঘন্য অপরাধের বিচার দ্রুত হওয়া উচিত এবং এর মাধ্যমে সমাজে একটি বার্তা পাঠানো প্রয়োজন।
আইনগত পদক্ষেপ
পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষক আরমান মিয়াকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হবে। শিশু নির্যাতনের মতো সংবেদনশীল মামলায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শিশু নির্যাতন ও সামাজিক দায়িত্ব
এই ঘটনা শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতা এবং সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। পাশাপাশি, শিশুদের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হবে এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
শেষ কথা
গাজীপুরের শ্রীপুরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সমাজের অন্ধকার দিকটি আবারও আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। শিশু নির্যাতনের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আশা করা যায়, এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সকল স্তরে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।