বর্তমান সময়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বেশ কিছু প্রধান শক্তির মধ্যে চলমান উত্তেজনা এবং সংঘর্ষের পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি, অনেকেই একে বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে হিসেবে দেখছেন। তবে, কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বব্যাপী সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যদি এই সংকটগুলো আরও বেড়ে যায়।
ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সংঘর্ষ: এক নতুন বিপদের শুরু
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনকে পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের, ব্যাপক সহায়তা দেওয়া শুরু হয়। এটি রাশিয়ার কাছে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয় এবং তাদের মধ্যে বিরোধ আরও তীব্র হতে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন বৃদ্ধি এবং ইউক্রেনের প্রতি সরাসরি সামরিক সহায়তা রাশিয়াকে ক্ষিপ্ত করে, যার ফলে তাদের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং পশ্চিমা শক্তির একতার কারণে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি রাশিয়া এই সংকটকে আরও তীব্র করে তোলে এবং পশ্চিমা দেশগুলির বিরুদ্ধে আগ্রাসী পদক্ষেপ নায়, তবে তা সরাসরি বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: বিশ্ব যুদ্ধের পথপ্রদর্শক?
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান করছে, যা রাশিয়ার বিরোধী শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এই পরিস্থিতি সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটাচ্ছে। যদি রাশিয়া কোনো বড় ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যেমন পশ্চিমা দেশগুলির সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা করা, তবে তা এক নতুন যুদ্ধের জন্ম দিতে পারে। এর ফলে, ইউক্রেন এবং রাশিয়া ছাড়াও বিশ্বব্যাপী আরো অনেক দেশের মধ্যে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো যেমন ব্রিটেন, ফ্রান্স, এবং জার্মানি ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে আসছে, তাদের অবস্থানও রাশিয়ার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সম্মিলিত সামরিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক সহায়তা, রাশিয়াকে আরও বিচলিত করছে। এভাবে, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান সংঘর্ষ বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।
ইউক্রেনের পরিস্থিতির পাশাপাশি, চীন, উত্তর কোরিয়া, এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্কও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলগুলিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং সামরিক উত্তেজনা চলছে, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান নিয়ে। এছাড়া, উত্তর কোরিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বিশ্ব রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, ইউক্রেন সংকট এবং রাশিয়ার সাথে বিরোধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ বিশ্বযুদ্ধের পথে বিশ্বকে ঠেলে দিতে পারে কিনা, তা একটি আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে, যা বিশ্বে উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য সংঘর্ষ বাড়িয়ে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক সহায়তা ইউক্রেনের জন্য একটি গ্লোবাল শত্রুতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্ব একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকাণ্ডের ফলে বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হতে পারে, এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি এবং তার মিত্রদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এটি একটি দ্বৈত মুখী চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে: একদিকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা রক্ষা, অন্যদিকে সংঘর্ষের আশঙ্কা।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এবং সামরিক পদক্ষেপের প্রভাব বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং উত্তেজনার সৃষ্টি করছে, যা ভবিষ্যতে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
অন্যদিকে, ইরান এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কও দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে। সারা বিশ্বে এই উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা একসময় বড় ধরনের সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে।
তবে, যদিও সংকটের আশঙ্কা রয়েছে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষা এবং যুদ্ধ এড়ানোর জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর মধ্যে চলমান আলোচনা এবং সমঝোতার চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বহু দেশ যুদ্ধ প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কাজ করছে, এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা যুদ্ধের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, সংকটটি পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হচ্ছে না, এবং যুদ্ধের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা যদিও একটি আলোচিত বিষয়, তবে এটি বাস্তবতা হয়ে উঠবে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। যদিও বেশ কিছু দেশ যুদ্ধ এড়াতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তবে বিশ্লেষকরা সতর্কতা অবলম্বন করছেন। যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক খুবই জটিল এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা পুরোপুরি অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
তবে, পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে পারে যদি বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলি সংঘর্ষের পরিবর্তে শান্তির পক্ষে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করে এবং সকল সমস্যার সমাধানে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে।