টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে ১৭ হাজারের ওপরে রান করা হাশিম আমলা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের এক উজ্জল নক্ষত্র শুধুই নয় ব্যক্তি জীবনে ইসলামী জীবন-যাপন করে হয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। বংশের পূর্বসূরিরা ভারতের গুজরাট থেকে স্থায়ী হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। সে অনুযায়ী হাশিম আমলার বাবা মোহামেদ আমলা স্থায়ী হন দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে। সেখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমলার। তার ক্রিকেটে হাতেখড়ি ওই শহরেই।

হাশিম আমলার ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেকের বছর তিনেক পর জাতীয় দলে তার দরজা খুলে যায়। এর আগে অভিষেক মৌসুমে ৮ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরিতে নিজের যোগ্যতার প্রমান রাখেন। যদিও ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকের পর দলে পাকাপোক্ত হতে তার সময় লেগেছে প্রায় দুবছর। ২০০৬ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ১৪৯ রানের ইনিংসের পর স্থায়ী হয় তার জায়গা।
টেস্ট অভিষেকের আরো বছর দুয়েক পর সীমিত ওভারে জায়গা পেলেও তার নামের পাশে সেঁটে ছিল টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা। ভারত সফরেই জানান দেন সব ফরম্যাটে খেলার যোগ্য তিনি। ওই বছর ওয়ানডে ও টেস্টে দুই ফরম্যাটে তার ব্যাটে আসে হাজারের ওপর রান। ওয়ানডে দলে জায়গা পোক্ত হওয়ার পর দ্রুততম ব্যাটার হিসেবে পাঁচ হাজার রানের মালিক হন। ওয়ানডের পাশাপাশি আমলা টেস্টও খেলেছেন সমানতালে। ২০১৩ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে নিজের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেন। প্রথম প্রোটিয়া হিসেবে করেন ট্রিপল সেঞ্চুরি।
ক্রিকেট মাঠের আমলা ধর্মীয় বিষয়েও বেশ মনোযোগী। ইসলামে নিষেধ আছে, তাই জার্সিতে কোনোদিন মাদক কিংবা অ্যালকোহল-জাতীয় পানীয়র লোগো নিয়ে খেলেননি। বোর্ডকে এর জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। কিন্তু তবুও নিজের বিশ্বাস এবং আমল থেকে একবিন্দুও সরে আসেননি। ম্যাচ জেতার পর দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে শ্যাম্পেইনের বোতল খুলে উল্লাস করার একটা রেওয়াজ রয়েছে। সেই উদযাপন থেকে দূরে থাকতেন হাশিম আমলা। এক ধারাভাষ্যকার অযাচিতভাবে তাকে এক সময় ‘সন্ত্রাসী’ তকমাও দিয়ে বসেন! তবুও নিজের লক্ষ্য থেকে একবিন্দুও সরেননি আমলা। ধর্ম আর ক্রিকেট চালিয়েছেন একসঙ্গে। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পশ্চিমা সংস্কৃতির ধারায় গড়ে ওঠা ক্রিকেট দলের সঙ্গে থেকেও ইসলামি জীবন ব্যবস্থা, ধর্মীয় রীতিনীতি তথা একজন প্রকৃত মুসলিমের জীবনবোধের দারুণ এক নজির স্থাপন করে গেছেন হাশিম আমলা। মাঠে ও ড্রেসিরুমে সঙ্গী সতীর্থরাও তাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন।