জামালপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজিব পরিবহনের সব বাস সার্ভিস বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে, যার ফলে একজন শ্রমিক আহত হন। এই সংঘর্ষের পর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি জামালপুরের সব রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। ছাত্র আন্দোলনটি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, দুর্ঘটনা, এবং বাসের বেপরোয়া গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পুলিশ উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ: ৩ মার্চ ২০২৫, সোমবার জামালপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাজিব পরিবহনের বাস সার্ভিস বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে, যার ফলে এক শ্রমিক আহত হয়েছেন। এই সংঘর্ষের পর, জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি সড়ক নিরাপত্তা ও বাস কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে জামালপুর জেলার সব রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত:
২ মার্চ ২০২৫, রোববার, জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকায় জামালপুরগামী রাজিব পরিবহনের একটি বাস একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে ইজিবাইকচালক আবুল কাসেমের মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার প্রতিবাদে জামালপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখা জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সড়ক অবরোধ করে।
ছাত্র আন্দোলনের দাবী:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের ছয় দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল:
- অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা
- যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করা
- বাসের বেপরোয়া গতি বন্ধ করা
- যাত্রীদের সঙ্গে বাসের চালক ও শ্রমিকদের খারাপ ব্যবহার বন্ধ করা
- বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা
- রাজিব পরিবহনের সব বাস সার্ভিস বন্ধ করা
তারা রাজিব পরিবহনের বাস সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে, বিশেষ করে তাদের বেপরোয়া চালক এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে।
ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া:
ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধের পর, বাসশ্রমিকদের সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই উত্তেজনা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার রূপ নেয়। এক পর্যায়ে মনির (৩২) নামের একজন বাসশ্রমিক আহত হন। এই সংঘর্ষের ফলে জামালপুর-টাঙ্গাইল রুটে এবং জামালপুর জেলার সাত উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
বাস মালিক সমিতির প্রতিবাদ:
এ ঘটনার প্রতিবাদে, জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি সড়ক নিরাপত্তা ও বাস কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য জামালপুর জেলার সব রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। তারা দাবি করেছে, বাস, চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে হবে।
অবরোধের পর পরিস্থিতি:
সড়ক অবরোধ এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনার পর, প্রায় দুই ঘণ্টা পর উভয় পক্ষ সড়ক অবরোধ থেকে সরে আসে। তবে, ঢাকা ও অন্যান্য দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
পুলিশের ভূমিকা:
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক জানিয়েছেন, উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি সমাধানের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেছেন, বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
জেলার পরিবহন ব্যবস্থায় বিপর্যয়:
এই সংঘর্ষের পর জামালপুরে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে। শেরপুর-জামালপুর-টাঙ্গাইল রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধ এবং উত্তেজনা শেষে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, বাস মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের আন্দোলন ও সড়ক অবরোধ পরিবহন ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি, দুর্ঘটনা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তারা মনে করছেন, সরকার এবং পরিবহন কর্তৃপক্ষকে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা যায় এবং যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
এই সংঘর্ষ এবং প্রতিবাদ আন্দোলন জামালপুর জেলার পরিবহন ব্যবস্থার সুরক্ষা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা বিষয়ে গভীর চিন্তার অবকাশ সৃষ্টি করেছে। ছাত্র আন্দোলন ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আগামীতে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, তাই দ্রুত একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন।