গাজা অঞ্চলে বর্তমান সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে, বহু সৈন্য এবং সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে, তবে এই সংখ্যা প্রতিদিন পরিবর্তিত হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকার, বিশেষত গাজার পরিস্থিতি নিয়ে, অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মহল এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি গাজার মানুষের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, কিন্তু নেতানিয়াহু এবং তার প্রশাসন এর ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ বা উক্তি প্রদান করেননি। গাজায় আটকে থাকা মানুষদের জীবনকে নিয়ে নেতানিয়াহুর যে কোনো বিশেষ ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গি নেই, এমনটাই মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
এই পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন যে, গাজার পরিস্থিতি নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের বক্তব্যগুলো প্রায়শই নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক একপাক্ষিক অবস্থান নেয়, যেখানে সাধারণ মানুষের দুর্দশা বা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষিত হচ্ছে। তবে, এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে ইসরায়েল সরকারের মনোভাব পরিবর্তন হতে পারে, এই সম্ভাবনা এখনো অমীমাংসিত।
গোলান যে মন্তব্য করেছেন, তা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়ে কিছুটা ইঙ্গিতপূর্ণ। তাঁর মতে, নেতানিয়াহু এই যুদ্ধের মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে এবং কিছু ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণ করতে চান, যা যুদ্ধ বন্ধের আগ্রহকে দমন করছে।
নেতানিয়াহু এবং তার প্রশাসন এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা নিয়ে তাদের অবস্থান জোরালো করছে, তবে গোলান বা অন্যান্য সমালোচকরা বিশ্বাস করেন যে, এই ধরনের সামরিক সংঘর্ষে বেসামরিক মানুষদের যন্ত্রণা এবং ক্ষতি বাড়ছে, কিন্তু নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই যুদ্ধ চলমান রাখতে চান। তাঁর মতে, যুদ্ধ থামানো মানে হয়তো কিছু রাজনৈতিক লাভের ক্ষতি হবে, যা নেতানিয়াহুর জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
এই ধরনের মন্তব্য ইসরায়েলি সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং জনগণের মনোভাবের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ীত্ব শুধু মানবিক দুর্দশাই বাড়ায়, বরং রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও পরিবর্তন ঘটাতে পারে, বিশেষত যখন নেতানিয়াহু বা তার প্রশাসনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমালোচনা বৃদ্ধি পায়।
গোলান আরও দাবি করেছেন যে, ইসরায়েলির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছেন, যদিও একটি চুক্তি অনুসারে প্রথম পর্যায়ের ১৬তম দিনে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করার কথা ছিল। তাঁর মতে, ইসরায়েল এই আলোচনা পরিহার করছে, যা একটি গুরুতর রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
এটি আরও স্পষ্ট করে যে, ইসরায়েল যুদ্ধের সমাপ্তি বা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে থাকলেও নেতানিয়াহু তার অবস্থান পরিবর্তন করতে অস্বীকৃত। গোলান এই পরিস্থিতিকে ইসরায়েলের নেতৃত্বের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, যা সংকটের সমাধান না করে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
এছাড়া, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা না হওয়ার ফলে গাজা অঞ্চলের মানুষের দুর্দশা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও ইসরায়েলি সরকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গোলান নেতানিয়াহুর অবস্থানকে সমর্থন না করে বলেছেন, যারা গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তি চাচ্ছেন, তাদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতির দিকে যেতে হবে এবং গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ থেকে সরে যেতে হবে।”
এটা প্রমাণ করে যে, গোলান মনে করেন, শুধু তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতির মধ্যে আটকে না থেকে, একটি টেকসই সমাধানে পৌঁছানো প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতে আরো বড় সংঘর্ষ ও মানবিক সংকট এড়াতে সহায়ক হতে পারে। তাঁর মতে, দীর্ঘমেয়াদী শান্তির জন্য গাজা অঞ্চলের পরিস্থিতি পরিবর্তন করা এবং সেখান থেকে সরে আসা অত্যন্ত জরুরি।
গোলানের বক্তব্য একটি কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিফলিত হয়, যেখানে সাময়িক সমাধান না করে একটি স্থায়ী ও কার্যকর শান্তির জন্য আরো দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে।
গোলান এর আগেও ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের নীতি এবং নেতানিয়াহুর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একাধিকবার মত প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রায়ই সরকারের সামরিক কৌশল এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর সমালোচনা করেছেন, যা গাজার যুদ্ধের পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে। এর ফলে, গাজার পরিস্থিতি এবং সেই সংক্রান্ত আলোচনার জন্য নেতানিয়াহুর অবস্থানকে নিয়ে বিরোধী নেতাদের মধ্যে ক্রমাগত সমালোচনা দেখা গেছে।
বিরোধীরা দাবি করছেন যে, নেতানিয়াহু গাজার সংকট সমাধানে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তা না শুধু মানবিক দিক থেকে বরং রাজনৈতিক দিক থেকেও বিপজ্জনক। তাঁদের মতে, নেতানিয়াহুর নীতির কারণে ইসরায়েল একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে, যা শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এছাড়া, অনেক সমালোচক মনে করছেন যে, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রতি কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি এবং সম্পর্কের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতি তীব্র হওয়ায়, ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতানিয়াহুর এই কার্যকলাপ আরও বড় প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে, যেভাবে তিনি যুদ্ধের সময়কালে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাইছেন, তাতে বিশ্লেষকরা ভবিষ্যতে আরও বড় বিরোধী আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত এবং তার সরকারের কার্যকলাপ ইসরায়েলের সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করছে। একদিকে, তার সমর্থকরা মনে করছেন যে, নেতানিয়াহু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েই দেশকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম, তবে অন্যদিকে বিরোধীরা অভিযোগ করছে যে, তিনি সংকটের মধ্যে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করার জন্য যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন।
এই ধরনের পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েলে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। বিরোধী দলগুলো এবং সাধারণ জনগণ যদি মনে করে যে, নেতানিয়াহু জাতীয় নিরাপত্তার চেয়ে তার নিজস্ব রাজনৈতিক লাভের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন, তবে তা ব্যাপক বিক্ষোভ এবং আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে। বিশেষ করে, গাজার সংঘর্ষ এবং মানবিক সঙ্কট যদি আরও তীব্র হয়, তাহলে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সরকারের প্রতি অনাস্থা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সংকটের মাঝেও একটি টেকসই রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা, যা কেবলমাত্র যুদ্ধের অবসান নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী শান্তি এবং স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে।