স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির দখল থাকলেও বাংলাদেশের সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে পণ্য আনার সময় সিটওয়েতে মিয়ানমার সরকার এবং পরে নাফ নদীর সীমান্ত অতিক্রম করার সময় আরাকান আর্মিকে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল হলেও বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকার এবং উভয় পক্ষের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতি সমাধানে কাজ করছে।
তিনি এই কথা বলেন শনিবার কক্সবাজারে এক অনুষ্ঠানে, যেখানে তিনি বিজিবির ৪টি ইউনিট উদ্বোধন করেন।
কক্সবাজার সফরকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবির উখিয়ার ৬৪ ব্যাটালিয়ন সহ ৪টি নতুন ইউনিট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এতে ঢাকার স্টেশন সদর দপ্তর, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং গাজীপুর ডগ স্কোয়াড-৯ ইউনিটও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, রামু সেনানিবাসের ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম এবং অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সীমান্তের নিরাপত্তা এখন পুরোপুরি সুরক্ষিত, তবে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকারের সীমান্ত কৌশল আমাদের কাজকে কিছুটা জটিল করে তুলছে।” তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ এর ফলে সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাদক চোরাচালান এবং ইয়াবা ব্যবসা, যা সীমান্তে আরও জটিলতা তৈরি করছে।
তিনি রোহিঙ্গাদের দ্রুত তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন এবং জানান, বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। “তাদের যত দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া যাবে, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল,” বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে বিজিবি এবং বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু তারপরও কিছু ঘটনা ঘটছে।” তিনি জানান, সীমান্ত হত্যার ঘটনা কমানোর জন্য সরকার ও বিজিবি কাজ করছে, তবে এটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন, কারণ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা বিএসএফের হাতে রয়েছে।
এছাড়া, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মিয়ানমার থেকে পণ্য আনার সময়ে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, “মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে এবং সরকার এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে।”
এছাড়া তিনি কক্সবাজারের সাম্প্রতিক অপহরণের প্রবণতা এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জড়িত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত তাদের ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানান।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে যে, সীমান্তের নিরাপত্তা এবং সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ঝুঁকি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।