যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা স্যার কির স্টারমার ইউক্রেনের জন্য £১.৬ বিলিয়ন মিসাইল চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই চুক্তির আওতায়, ইউক্রেন ৫,০০০ এরও বেশি উন্নত মিসাইল পাবে, যা বেলফাস্টে তৈরি হবে।
এছাড়া, স্যার কির স্টারমার ইউক্রেনের সাথে আন্তর্জাতিক সমঝোতা এবং সমর্থন দৃঢ় করতে তাঁর পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, “আমার সমর্থন ইউক্রেনের জন্য অবিচলিত।” তিনি আরও বলেন যে, ইউক্রেনের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন
লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে স্যার কির স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উপস্থিত ছিলেন। এই শীর্ষ সম্মেলনে ১৭টি ইউরোপীয় দেশ ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ শান্তি এবং নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেন।
সম্মেলনের পর, স্যার কির স্টারমার ইউক্রেনের সমর্থনে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছেন, যেখানে তারা “কোলিশন অফ দ্য উইলিং” নামে একটি জোট গঠন করেছে। এই জোট ইউক্রেনের সম্মুখসেনায় সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নেবে যদি কোনো শান্তি চুক্তি হয়।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব
এই £১.৬ বিলিয়ন মিসাইল চুক্তির মাধ্যমে, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। স্যার কির স্টারমার বলেছেন, “এটি ইউক্রেনের অবকাঠামো রক্ষা করবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার পর ইউক্রেনকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে।”
এছাড়া, এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্যও একটি ইতিবাচক দিক। এটি ২০০টি নতুন চাকরি তৈরি করবে এবং যুক্তরাজ্যের ৭০০ কর্মসংস্থানকে সমর্থন করবে। মন্ত্রিসভা আরও জানিয়েছে যে, এই চুক্তির মাধ্যমে ৫,০০০ “লাইটওয়েট মাল্টিরোল মিসাইল” (LMM) তৈরি হবে, যা রাশিয়ার ড্রোন ও মিসাইল হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা প্রদান করবে।
এই চুক্তি শুধুমাত্র সামরিক সহায়তা নয়, বরং যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের অংশ। স্যার কির স্টারমার এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে একটি “১০০ বছরের পার্টনারশিপ” চুক্তি সই করেছিলেন, যার অধীনে যুক্তরাজ্য প্রতি বছর £৩ বিলিয়ন করে ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে এবং এটি ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেনের শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। স্যার কির স্টারমার এবং অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা বিশ্বাস করেন যে, ইউক্রেনের শান্তি প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, “আমরা বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী, এবং তাদের সঙ্গে কাজ করে আমরা ইউক্রেনের জন্য একটি শক্তিশালী শান্তি চুক্তি অর্জন করতে সক্ষম হব।”
এই মিসাইল চুক্তি এবং ইউক্রেনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পদক্ষেপগুলি ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, ইউক্রেনের যুদ্ধ চলাকালে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর নিরাপত্তা এবং রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ মোকাবেলা করতে এই ধরনের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ।
এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল যেখানে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে এবং একই সঙ্গে ইউরোপের নিরাপত্তাও রক্ষা করা হবে।