প্রধানমন্ত্রী কীর স্টারমার সম্প্রতি ইউক্রেন বিষয়ক একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেন, যেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি সহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যাপী এই আলোচনা শেষে এখন ইউরোপীয় নেতারা একে একে ল্যাঙ্কাস্টার হাউস ত্যাগ করছেন, যেখানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি, রাশিয়ার আগ্রাসন এবং ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনা।
এদিকে, সম্মেলনের পর স্টারমার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিবেন, যেখানে তিনি সম্মেলনের মূল বিষয়াবলী এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বক্তব্য রাখবেন। এটি আগামী ১৭:০০ GMT-এ অনুষ্ঠিত হবে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানও এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি তুরস্কের আগের প্রস্তাবের পুনর্ব্যক্তি করেন, যা হচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা আয়োজনের। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর তুরস্ক প্রথমবারের মতো শান্তি আলোচনা আয়োজনের উদ্যোগ নেয় এবং কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে শস্য রপ্তানি নিয়ে একটি চুক্তি সফলভাবে বাস্তবায়ন করে।
ফিদান আরও জানান যে, তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান গত মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আনকারায় বৈঠক করেছেন। তুরস্ক ন্যাটো জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী এবং তারা শান্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে প্রস্তুত, তবে এটি নির্ভর করবে আলোচনা এবং চুক্তির প্রকৃতির ওপর।
বাল্টিক রাষ্ট্রের নেতাদের মধ্যে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া প্রতিনিধিরা সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও, প্রধানমন্ত্রী কীর স্টারমার তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন এবং তাদের সম্মেলনে আমন্ত্রণ না জানানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাওসেডার প্রধান উপদেষ্টা আস্থা স্কাইসগিরিতে জানান, স্টারমার তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল এড়িয়ে চলা হবে।
এছাড়া, স্টারমার বলেছেন, বাল্টিক দেশগুলো ইউক্রেনের সমর্থনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং তারা মনে করেন যে ইউরোপকে একত্রিত হতে হবে, যাতে কোনো শান্তিচুক্তি ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়।

প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জানান, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা করার পর একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হবে, যা আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়া শান্তির কথা বললেও তাদের আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য, ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ অর্জন করা জরুরি।
স্টারমার আরও বলেন, সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের যুদ্ধ থামানোর জন্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করা, যা পরবর্তীতে বিশ্ব নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইউরোপীয় নেতাদের উচিত একত্রিত হয়ে ইউক্রেনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা এবং যুদ্ধের সমাপ্তি নিশ্চিত করা।
সম্মেলনের শুরুতে, ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে তার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি বলেন, “ইউরোপে সবাইকে আরও বেশি সহযোগিতা করতে হবে। আমরা সবাই একটি শান্তিচুক্তি চাচ্ছি এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে। ইউরোপ সত্যিই এখানে বড় ভূমিকা পালন করছে।” তিনি আরও বলেন, ন্যাটোকে শক্তিশালী রাখতে ইউরোপকে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে।
সম্মেলনের শেষে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাজ্যের স্যান্ডরিংহামে পৌঁছেছেন, যেখানে তিনি কিং চার্লস তৃতীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ন সাক্ষাৎ, যা ইউক্রেনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং রাজকীয় পরিবার থেকে প্রশংসার সঙ্গে এসেছে।

সম্মেলনের মূল আলোচনা বিষয়গুলো
এই সম্মেলনে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল:
- ইউক্রেনের যুদ্ধ থামানো: ইউক্রেনের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বের নেতৃত্ব একত্রিত হয়ে কিভাবে সহায়তা করতে পারে।
- শক্তির মাধ্যমে শান্তি: শান্তি আলোচনা শুরু করতে এবং যুদ্ধের ক্ষতি কমাতে শক্তির প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা।
- ইউরোপের নিরাপত্তা: ইউরোপীয় দেশগুলোর একত্রিত হয়ে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবেলা করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা।
- অন্তর্ভুক্তির ভূমিকা: বাল্টিক রাষ্ট্র, তুরস্ক এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর ভূমিকা এবং তাদের সমর্থন।
এই সম্মেলনটি ইউক্রেনের পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধি এবং শান্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।