খাবার আলু বীজ আলু হিসেবে প্যাকেটজাত

জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার এম ইসরাত হিমাগার বীজ সংরক্ষণের না হলেও  এভাবেই নিম্নমানের খাবার আলু মানসম্মত  বীজ আলুর প্যাকেটজাত করছে। পাশেই পুনট কোল্ড স্টোরেজ। সেখানেও গোপনে বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কে বস্তায় ভরিয়ে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। এসব ট্রাক ভর্তি নিম্নমানের বীজ আলু তারা তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে গুদামে রাখছে। এরপর উন্নত জাতের বীজ আলু বলে অধিক দামে বিক্রি করছে। যেহেতু জেলায় পুরো দমে শুরু হয়েছে আগাম আলু রোপনের কাজ। এসময় দামের দিকে না তাকিয়ে  কৃষকদের চাহিদা থাকে ভাল বীজের।  আর ভাল বীজের আশায় কৃষকরা চল্লিশ কেজির এক বস্তা আলু কিনছেন সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত।  সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু হিমাগার মালিক ও মৌসুমি আলু ব্যবসায়ীরা প্রতারণা করছে কৃসকদের সাথে। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী কৃষকদের।
আলু উৎপাদনে জয়পুরহাট শীর্ষে থাকলেও এ জেলায় নেই কোন বীজ সংরক্ষণ হিমাগার। এ বছরও শুরু হয়েছে আগাম আলু চাষ। শুরুতেই আলুর বীজ সংকটে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু  হিমাগার মালিক ও আলু ব্যবসায়ীরা হিমাগারে রাখা খাবার নিম্ন মানের আলু  মানসম্মত বীজ বলে প্যাকেটজাত বাজারজাত করছে। এমন পরিস্থিতিতে  মানসম্মত আলু বীজ নিয়ে চরম হতাশায়  পড়েছেন চাষীরা। তবে  আলু বীজ ক্রয়ে কৃষকরা প্রতারিত হলে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারি কৃষি বিপননের।
হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, এম ইসরাত হিমাগার লি:, কালাই, জয়পুরহাট হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, পুনট কোল্ড স্টোরেজ লি:
হিমাগার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের বীজ হিমাগার না।  কিন্ত ব্যবসায়ী ও কৃষকরা তাদের বীজ আলু তাদের হিমাগারে রাখেন। কারণ বীজ সংরক্ষণ হিমাগারে আলু রাখতে গেলে এসব হিমাগারের চেয়ে অনেক বেশী পড়ে। এসব হিমাগার আর বীজ হিমাগারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে অনেক প্রার্থক্য। এ কারনে বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন অল্প খরচে তাদের হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে এখানেই প্যাকেটজাত করে নিয়ে যাচ্ছে।
আলু চাষী ও ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর বীজের চাহিদা বেশী হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে কৃষকদের। আর নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রয়ের কথা জানালেন বীজ ডিলাররা।
সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, গত বছর যে বীজ ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন কৃষক, সেটি এবার ১০০-১১০ টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। একদিকে আলুবীজের দাম বেশি, অন্যদিকে সার-কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচও বাড়ায় এ অঞ্চলের কৃষক আলু উৎপাদনে এরই মধ্যে বিপাকে পড়েছেন।
এদিকে চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদনের পরও চাষের জন্য আলুবীজের সংকট ও চড়া দামের অন্যতম কারণ কৃত্রিম সংকট ও অপ্রতুল সরকারি বরাদ্দ। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আলুবীজের বাজারকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। আবার ভুক্তভোগী কৃষকের মতে, সরকারিভাবে বরাদ্দ কম থাকায় ইচ্ছামতো আলুবীজের দাম বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। একমাত্র সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ বরাদ্দের পরিসংখ্যানের দিকে লক্ষ করলে কৃষকের অভিযোগের বিষয়টি সত্য প্রতীয়মান হয়।
কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, এ বছর আলুর উৎপাদন মৌসুমে কৃষক ও আলু মজুদকারীরা প্রতি কেজিতে তুলনামূলক বেশি টাকা লাভ করায় আগামী বছরের জন্য ব্যাপক হারে আলু চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেড়েছে কৃষকের আগ্রহ। চাষের চাহিদা বাড়ায় আলুবীজের সংকট তৈরি হয়েছে এবং দামও বেড়েছে।
সুতরাং একদিকে চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে বরাদ্দ কমেছে। সরকারি বরাদ্দ কম থাকলে অসাধু ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই এর সুযোগ লুফে নিতে চান। দাম বাড়িয়ে তারা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে চান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ আবশ্যক। নয় তো বাড়তি দাম ও সরবরাহ সংকটের কারণে কৃষক আলু চাষে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। কেননা কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুবীজের উচ্চদরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সার, কীটনাশক ও সেচ খরচ। চাষ কম হলে এর প্রভাব পড়বে উৎপাদনেও। এতে খাদ্য অনিরাপত্তার মতো সংকটগুলো আরো ঘনীভূত হবে। এমনিতেই টানা দুই বছরেরও অধিক সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের সাধারণ জনগণের খাদ্য গ্রহণের তালিকা ছোট হয়ে এসেছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে আলুবীজের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য প্রতিহত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। তাছাড়া বিএডিসির আলুবীজ বেশ মানসম্পন্ন। তাই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বীজের চেয়ে এর চাহিদাও বেশি। এদিক বিবেচনা করেও সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আশঙ্কা রয়েছে মানসম্পন্ন বীজ না পেলে উৎপাদন প্রত্যাশিত হবে না। ফলে সর্বস্বান্ত হতে পারেন অনেক কৃষক।
দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা জয়পুরহাটে এবার আলুবীজের চাহিদা ৬০ হাজার টন। বিপরীতে মজুদ রয়েছে ৬২ হাজার ৯৫০ টন। চাহিদার তুলনায় জোগান প্রায় তিন হাজার টন বেশি থাকার পরও বাজারে বীজের তীব্র সংকট। জয়পুরহাটের একাধিক ব্যবসায়ী বাজারে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বীজের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। আবার কোম্পানিতে বীজের যে চাহিদা জানানো হয়েছিল সে পরিমাণ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তারা আরেকটি সমস্যাও উল্লেখ করেছেন যে জেলায় বিএডিসির বীজ বিক্রয় কেন্দ্র না থাকায় ডিলারদের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করতে হয়। এতে আলুবীজ সংগ্রহেও ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের।
মেহেদী হাসান, কৃষি বিপনন কর্মকর্তা, জয়পুরহাট। বলেন,মানসম্মত আলুর বীজ বিক্রয়ের জন্য নিবন্ধিত হয় কৃষি বিভাগ হতে। তবে আলুর বীজ নিয়ে শুরু হয়েছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতারণা। প্রতারণা বন্ধে সব ধরণের পদক্ষেপের কথা জানালেন  কৃষি বিপনন কর্মকর্তা। আরও জানায়  ১৯টি হিমাগার আছে। এবছর জেলায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষমাত্রা থাকলেও চাষ হয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ।
স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে, যাতে কৃত্রিম সংকট দূর হয়। যথাযথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা জরুরি। আলু উৎপাদনের বিশেষ এলাকাগুলো দায়িত্বপ্রাপ্তদের অজানা নয়। কোথায় সংকট তৈরি হয়েছে, সরকারি দামের চেয়ে বেশি দামে আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে, সেটিও সবার জানা। সুতরাং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃষকের বীজপ্রাপ্তি সহজ ও সুলভ মূল্যে হতে হবে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেসব অসাধু ব্যবসায়ী আলুবীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে এতে বাজারে আলুবীজের সরবরাহ সংকট ও চড়া দাম খুবই অপ্রত্যাশিত। সরকার এদিকে নজর দেবে এবং কৃষকের বীজ সংগ্রহের ভোগান্তি দূর করবে-এটাই  প্রত্যাশা ৷
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * জয়পুরহাটে আলুবীজের তীব্র সংকট * দাম ঊর্ধ্বমুখী খাবার আলু প্রতারণা করে বীজ আলু হিসেবে প্যাকেটজাত
সর্বশেষ সংবাদ