ডুবোচর জেগে ওঠায় বাঘাবাড়ি নৌবন্দরগামী কার্গো-জাহাজ চলাচল বন্ধ
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় যমুনা নদীর পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া থেকে কৈটোলা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল বালুর চর জেগে উছেছে। এছাড়া কৈটোলা এলাকায় প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে ডুবোচর জেগে উঠেছে। ফলে চট্টোগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ওটিসি-পাওয়ার-জিরো নামের একটি কার্গো জাহাজ সাড়ে ৮ লাখ লিটার ডিজেল তেল নিয়ে ওই স্থানে গত ৩দিন ধরে আটকা পড়ে আছে। এ জাহাজটি আটকা পড়ার খবরে আরও ৬/৭টি জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ নগরবাড়ি এলাকায় নঙ্গর করে রাখা হয়েছে। কৈটোলা এলাকার ওই স্থানে ড্রেজিং সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের আটকা পড়ে থাকতে হবে। কবে নাগাদ ওখানে ড্রেজিং শেষ হবে তা সঠিক ভাবে জানাতে পারেনি ড্রেজিং কতৃপক্ষ।
আটকা পড়া ওটিসি-পাওয়ার-জিরো কার্গো জাহাজের মাস্টার মো. মীর হোসেন বলেন, গত ৩দিন ধরে কৈটোলা এলাকায় সাড়ে ৮ লাখ লিটার ডিজেল তেল নিয়ে আটকা পড়ে আছি। আমাদের জাহাজ উদ্ধারে গত ২ দিন ধরে ড্রেজার এসেছে। কিন্তু এখনও তারা সেটিং কাজ শেষ করতে পারেনি। প্রথম দিন সামান্য অংশ ড্রেজিংয়ের পর শুধু পোটপাট করে যাচ্ছে ড্রেজিংয়ের কোনো খবর নেই। ফলে নির্জন এই স্থানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাকাত বা দূর্বৃত্তের হামলার আশংকায় আতংকের মধ্যে রয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের উদ্ধার করা না হলে যেকোনো বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে এখানে। ফলে অন্য জাহাজগুলি এখানে না এসে তারা নগরবাড়ি এলাকায় নঙ্গর করে রয়েছে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে কৈটোলা এলাকার ডুবোচর অপসারণে ড্রেজিং কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাংলাদেশ নৌযান ফেডারেশন বাঘাবাড়ি নৌবন্দর শাখার সহ সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া বলেন, নিয়মঅনুযায়ী যেখানে পানি কম ও ডুবো চর রয়েছে সেখানে বিআইডব্লিইটিএ এর পাইলটরা বয়া ও মার্কা স্থাপন করে জাহাজ চলাচল নির্বিঘ্ন করবেন। কিন্তু পাইলটদের অবহেলার কারণে এই নৌরুটের ওই সব স্থানের কোথাও বয়া ও মার্কা দেওয়া নেই। ফলে জাহাজ চলাচলকালে ডুবোচরে আটকা পড়ছে। বর্তমানে নগরবাড়িতে ৭টি ও কৈটোলায় একটি জাহাজ আটকা পড়ে আছে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে কৈটোলা এলাকায় ড্রেজিং সম্পন্ন করে এ জাহাজগুলো বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে পৌছানোর ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাঘাবাড়ি নৌবন্দর লেবার এজেন্ট আবুল হোসেন বলেন, এ নৌরুট দ্রুত সচল করা না হলে আসন্ন রবি ও ইরি-বোরো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে আপদকালীন সার মজুদ ও জ্বালানী তেল সরবরাহ বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে জাহাজ না এলে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। আমরাও আর্থিক ভাবে চরম লোকশানে পড়ে যাবো।
বিপিসির বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোর ইনচার্জ ও যমুনা ওয়েল কোং এর ব্যবস্থাপক আবুল ফজল মো: সাদেকিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো। তিনি আরও বলেন, বাঘাবাড়িতে ডিজেলের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ফলে এ ঘটনায় এই মূহুর্তে ডিজেলের উপরে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, বাঘাবাড়ী বন্দরটি দ্বিতীয় শ্রেনীর নৌ বন্দর। এখানে ৭ ফুট গভীরতার জাহাজ অনায়াসে চলাচল চলাচল করছে। বর্তমানে এই চ্যানেলে ৯ ফুট গভীরতা আছে। কোন ব্যবসায়ী যদি বেশি মুনাফার আসায় প্রথম শ্রেনীর জাহাজ এই দ্বিতীয় শ্রেনীর চ্যানেলে প্রবেশ করে তাহলে তো আটকে যেতেই পারে। ফলে এই দায়ভার নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষের নয়।