রুপালি গিটারের জাদুকর চলে যাওয়ার ৬ বছর

‘দরজার ওপাশে’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘কেউ সুখী নয়’ গানগুলোর গায়ক মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মারা যান আইয়ুব বাচ্চু। চার দশকের সংগীতজীবনে করেছেন অনেকগুলো স্মরণীয় কম্পোজিশন। আগলি বয়েজ,ফিলিংস,সোলস হয়ে এলআরবি এই ছিল তার পথচলা। অন্যদিকে সলো ক্যারিয়ার, বিজ্ঞাপন ও সিনেমায় দেখা গেছে ভিন্নরূপ।
অন্তত দুটি প্রজন্ম বড় হয়েছে তার সাউন্ডে। ফলে ইউটিউবে তার গাওয়া ‘প্রতিদান চাই না’র মতো আধুনিক বাংলা গানের নিচে কোনো শ্রোতা মন্তব্য করে রাখেন ‘যত দিন বাঙালি থাকবে, যত দিন বাংলা ভাষা থাকবে এসব গান আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। ধন্যবাদ আমার শৈশব-কৈশোর রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য।’
আশ্চর্য হলেও সত্যি,মানুষ যখন চলে যায়,তখন তার কীর্তি ছাড়া সব মুছে যেতে থাকে। তাকে ধরে রাখে শুধু পরিবার। যদিও জীবদ্দশায় তারকাদের সব আয়োজন থাকে ভক্ত, আয়োজক, প্রযোজকদের লক্ষ করে। তবে আইয়ুব বাচ্চুর ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ব্যতিক্রমই ঘটছে। তার ভক্তরা চট্টগ্রামে যান কবর জিয়ারত করতে। থাকে অন্য আয়োজন। এর মধ্যে তৈরি হয়েছে আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশনও।
আইয়ুব বাচ্চু একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতজ্ঞ, গায়ক- গীতিকার এবং গীটারবাদক ছিলেন। তিনি রক ব্যান্ড এল আর বি এর গায়ক ও গীটারবাদক হিসেবে পুরো বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তাকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতের ধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী এবং গীটারবাদক বলা হয়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধীন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন।
জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডগুলো বা গায়করা আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে খুব কমই মন্তব্য করতেন। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর তাদের কণ্ঠে ‘মতামত’ ছাড়াও এলআরবি এবং আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। এমনিতে মফস্বলগুলোয় খুব কম কনসার্টই আছে, যেখানে তার গান গাওয়া হয় না। তার গান গেয়েই মঞ্চে তৈরি হতে হয় নতুন ব্যান্ডগুলোকে।
এলআরবির ১২টি অ্যালবামের পাশাপাশি ১৫টি সলো ও একটি ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যালবাম রেখে গেছেন আইয়ুব বাচ্চু। এ ছাড়া রয়েছে মিক্সড অ্যালবাম, সিনেমায় অজস্র গান। তার বিভিন্ন ধারার গানের শ্রোতা আলাদা, সাউন্ডও। কিন্তু গিটারকে সামনে নিয়ে আসায় যে ভূমিকা তিনি রেখে গেছেন, তা আরও অনেক দিন উত্তর প্রজন্মকে আলোড়িত করবে।
গিটারের সুরের মূর্ছনায় কোটি ভক্তদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন গিটার জাদুকর আইয়ুব বাচ্চু। এ কিংবদন্তিকে হারানোর ছয় বছর আজ। ২০১৮ সালে আজকের এদিনে ভক্ত-অনুরাগীদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান আইয়ুব বাচ্চু। অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা তিনি।
১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল সোলস ছেড়ে ‘এলআরবি’ গড়ে তুলেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। কিশোর বয়সে পশ্চিমা সংগীতের প্রেমে পড়েন তিনি। ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামে কলেজজীবনে সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে তিনি একটি ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন। নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে নাম বদলে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। সেই ব্যান্ডের গায়ক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ এবং বাচ্চু ছিলেন গিটারিস্ট। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর নানা অনুষ্ঠানে গান করত তাদের এই ব্যান্ড।
চার দশকের গায়কী জীবনে ১২টি ব্যান্ড, ১৬টি একক ও বহু মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর। তার উল্লেখযোগ্য অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে, সুখ, তবুও, ঘুমন্ত শহরে, স্বপ্ন, আমাদের বিস্ময় (ডাবল অ্যালবাম), মন চাইলে মন পাবে, অচেনা জীবন, মনে আছে নাকি নাই, স্পর্শ, যুদ্ধ। এ ছাড়া একক শিল্পী হিসেবে তার অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে রক্ত গোলাপ, ময়না, কষ্ট, সময়, একা, প্রেম তুমি কী!, দুটি মন, কাফেলা, প্রেম প্রেমের মতো, পথের গান, ভাটির টানে মাটির গানে, জীবন, সাউন্ড অব সাইলেন্স, রিমঝিম বৃষ্টি, বলিনি কখনো, জীবনের গল্প।
আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া সেই তুমি, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, এখন অনেক রাত, মেয়ে, কেউ সুখী নয়, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, এক আকাশের তারা গানগুলো আজো শ্রোতাদের মুখে মুখে।
গানের জন্য দিন-রাত ছুটে বেড়িয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। স্বাভাবিকভাবেই পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননি পরিবারকে। তবু চিরায়ত নিয়মে পরিবারই তাঁকে গেঁথে রেখেছে হৃদয়ে, পরম যত্নে। নিয়মিত আয়োজনে শিল্পীকে স্মরণ করেন স্ত্রী-সন্তানরা।
দেশের ব্যান্ড মিউজিকের গতিপথ সাজিয়ে দিয়েছেন যে কজন, তাঁদের অন্যতম আইয়ুব বাচ্চু। কিংবদন্তি এই তারকার প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১৮ সালের আজকের দিনে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ‘ রুপালি গিটার’-এর জাদুকর। ছয় বছর পর তাঁকে কতটুকু মনে রেখেছে সংগীতাঙ্গন? খোঁজ নিয়েছেন কামরুল ইসলাম।
গানের জন্য দিন-রাত ছুটে বেড়িয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। স্বাভাবিকভাবেই পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননি পরিবারকে। তবু চিরায়ত নিয়মে পরিবারই তাঁকে গেঁথে রেখেছে হৃদয়ে, পরম যত্নে। নিয়মিত আয়োজনে শিল্পীকে স্মরণ করেন স্ত্রী-সন্তানরা।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষেও থাকছে দোয়া-মাহফিল। এবির স্ত্রী ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনা বলেন, ‘পরিবার থেকে তো নিয়মিত আয়োজন থাকেই। তবে এসব নিয়ে বাইরে কিছু বাচ্চুকে কতটা মনে রেখেছে সংগীতাঙ্গনজানাতে চাই না। আর চট্টগ্রাম মিউজিশিয়ানস ক্লাবের পক্ষ থেকেও বরাবরের মতো দোয়া-মিলাদ ও স্মরণসভা হবে।
আইয়ুব বাচ্চুর ফুসফুসে পানি জমার কারণে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন (২৭ নভেম্বর, ২০১২)। সেখানে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হন। তারপর বাচ্চু ১৮ই অক্টোবর ২০১৮ সালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। একই দিন সকালে অসুস্থবোধ করায় তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা ৯টা ৫৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * রুপালি গিটারের জাদুকর চলে যাওয়ার ৬ বছর
সর্বশেষ সংবাদ