ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি “প্রাথমিক” খনিজ সম্পদ চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে সমঝোতা হয়েছে, যা ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করেছেন যে এই চুক্তি ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত চুক্তির দ্বার উন্মুক্ত করবে। তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে এখনো কোনো নিরাপত্তা গ্যারান্টি চূড়ান্ত হয়নি।
চুক্তির মূল শর্তাবলী কী?

এই চুক্তির মূল শর্তাবলী এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে বুধবার ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শমিহাল ঘোষণা করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন চুক্তির একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে।
শমিহাল ইউক্রেনীয় টেলিভিশনে বলেন, “এই প্রাথমিক চুক্তিতে একটি ‘বিনিয়োগ তহবিল’ (Investment Fund) তৈরির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহৃত হবে।”
তিনি আরও বলেন যে, এই তহবিল ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে পরিচালনা করবে, যেখানে “ইউক্রেন তার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খনিজ সম্পদ, তেল ও গ্যাস থেকে ৫০% আয় এই তহবিলে জমা দেবে, যা পরে ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যয় করা হবে।”
নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিয়ে বিতর্ক
চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি চাইছিলেন। তবে, বুধবার তিনি জানান যে এখনো চুক্তিতে এমন কোনো গ্যারান্টির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
তিনি বলেন, “আমি চাই যে চুক্তিতে নিরাপত্তা গ্যারান্টির একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত হোক। এটি গুরুত্বপূর্ণ।”
বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যদি ট্রাম্প ইউক্রেনের নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিষয়ে রাজি না হন, তাহলে তিনি চুক্তি থেকে সরে আসবেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি ন্যাটোর পথ খুঁজতে চাই, বা অন্তত একটি বিকল্প নিরাপত্তা চুক্তি। যদি আমরা নিরাপত্তা গ্যারান্টি না পাই, তাহলে যুদ্ধবিরতি হবে না, আর কিছুই কার্যকর হবে না।”
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রত্যক্ষ নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেবে না।
তিনি বলেন, “আমরা ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতে চাই না। এটি ইউরোপের দায়িত্ব।” তবে তিনি যোগ করেন যে, “আমেরিকান শ্রমিকদের ইউক্রেনে উপস্থিতি একটি স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা গ্যারান্টি হিসেবে কাজ করবে।”
খনিজ সম্পদের বিনিময়ে অর্থ ফেরত পেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে $৩০০ বিলিয়ন থেকে $৩৫০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সাহায্য দিয়েছে এবং এটি ফেরত পেতে চায়।”
তবে জার্মান থিংক-ট্যাঙ্ক “কিয়েল ইনস্টিটিউট” বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে $১১৯ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছে।
এই অর্থ ফেরতের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ট্রাম্প ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ ব্যবহারের চুক্তি চাইছেন। তিনি বলেন, “আমরা ইউক্রেনকে খনিজ সম্পদের বিনিময়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অধিকার দেবো এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করবো যতক্ষণ না রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তি হয়।”
চুক্তির শর্ত নিয়ে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব
প্রাথমিক চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল।
প্রথমে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের $৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদের ওপর অধিকার চেয়েছিল, যা জেলেনস্কি প্রত্যাখ্যান করেন।তবে, সাম্প্রতিক আলোচনার পর এই দাবিটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
একজন ইউক্রেনীয় সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, “বর্তমানে চুক্তির শর্তগুলো ইউক্রেনের জন্য অনেক ভালো হয়েছে।”
ভবিষ্যতের করণীয় কী?
প্রধানমন্ত্রী শমিহাল জানিয়েছেন, চুক্তি তখনই চূড়ান্ত করা হবে, যখন জেলেনস্কি এবং ট্রাম্প নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিয়ে একমত হবেন এবং কীভাবে এই চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নীতির সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তা ঠিক করবেন।
এদিকে, ট্রাম্প বলেছেন, “রাশিয়া ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মেনে নিতে রাজি রয়েছে,” তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে খনিজ সম্পদ চুক্তির বিষয়টি শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং কূটনৈতিক এবং সামরিক নিরাপত্তার সঙ্গেও জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদের বিনিময়ে অর্থ ফেরত চায়, কিন্তু ইউক্রেন চায় নিরাপত্তা গ্যারান্টি। চুক্তির শর্তাবলী চূড়ান্ত না হওয়ায় এটি এখনো একটি অমীমাংসিত ইস্যু।
জেলেনস্কি চুক্তির শর্ত নিয়ে আরও আলোচনার পক্ষে, বিশেষ করে নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চান। অন্যদিকে, ট্রাম্প অর্থনৈতিক দিকটি প্রাধান্য দিচ্ছেন এবং ইউরোপকে ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে বলছেন।
এই চুক্তি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে কি না, বা এতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত হবে, তা আগামী কয়েক সপ্তাহের আলোচনার ওপর নির্ভর করবে।