রোম, ২৪ ফেব্রুয়ারি: ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে। শনিবার এক দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে রক্ত সঞ্চালন করেন। ভ্যাটিকানের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পোপের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি উচ্চ-প্রবাহযুক্ত অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন। চিকিৎসকরা তার অবস্থা ‘গুরুতর’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তার জন্য উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
🔴 সংকটের শুরু এবং বর্তমান অবস্থা
ভ্যাটিকান থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “পোপের বর্তমান অবস্থা গতকালের তুলনায় আরও গুরুতর। তিনি বেশি অসুস্থ বোধ করছেন এবং তার প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেছে, যা অ্যানিমিয়ার লক্ষণ হতে পারে।”
পোপ বর্তমানে জেমেলি হাসপাতালের একটি বিশেষ ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ফুসফুসের সংক্রমণ গুরুতর হওয়ায় তাকে নিয়মিত অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে এবং তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
🏥 দীর্ঘদিনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা
পোপ ফ্রান্সিস আগে থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তরুণ বয়সে, মাত্র ২১ বছর বয়সে, তার ফুসফুসের একটি অংশ কেটে ফেলা হয়েছিল। এর ফলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি, বেশ কয়েকদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগার পর তাকে রোমের জেমেলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছে এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।
এই অবস্থায় রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় চিকিৎসকরা রক্ত সঞ্চালনের সিদ্ধান্ত নেন। চিকিৎসকদের মতে, এই বয়সে নিউমোনিয়া ও অ্যানিমিয়া একসঙ্গে হলে বিপদজনক হতে পারে।
🌍 বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও প্রার্থনা
পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ক্যাথলিক অনুসারীর মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে ভ্যাটিকান সিটি, রোম, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
রোমের জেমেলি হাসপাতালের বাইরে ভক্তরা মোমবাতি, ফুল ও প্রার্থনার বার্তা রেখে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ সেখানে অবস্থান করে নিরব প্রার্থনায় সময় কাটাচ্ছেন।
📢 পোপের নিয়মিত কার্যক্রম বাতিল
ভ্যাটিকান ঘোষণা দিয়েছে যে, আগামী রবিবারও তিনি প্রকাশ্যে সাপ্তাহিক প্রার্থনা পরিচালনা করতে পারবেন না। এটি হবে দ্বিতীয় সপ্তাহ, যখন তিনি জনসমক্ষে আসতে পারবেন না।
এর আগে শুক্রবার, চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন যে পোপের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল এবং তিনি ওষুধের প্রতি ভালো সাড়া দিচ্ছিলেন। কিন্তু শনিবার হঠাৎ করেই তার অবস্থার অবনতি ঘটে, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
⏳ চিকিৎসকদের সতর্ক বার্তা
চিকিৎসকদের মতে, পোপ ফ্রান্সিসের বর্তমান অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ এবং তার সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। ভ্যাটিকানও তার সুস্থতার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
এদিকে, হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে তারা জানিয়েছেন যে, যেকোনো সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন নেতা ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব পোপের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
- যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “পোপ ফ্রান্সিস কেবল একজন ধর্মীয় নেতা নন, তিনি মানবতার একজন মহান প্রতিনিধি। আমরা তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।”
- ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মাইলি, যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস সহ বিশ্বের বিভিন্ন নেতা ও ক্যাথলিক চার্চের প্রধান ধর্মগুরুরা পোপের সুস্থতা কামনায় বার্তা দিয়েছেন।
পোপ ফ্রান্সিস তার ১২ বছরের দায়িত্বকালে ক্যাথলিক চার্চকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালনা করেছেন এবং সারা বিশ্বে মানবিকতা,

শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করেছেন। তবে তার বর্তমান সংকটজনক শারীরিক অবস্থা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্ববাসী এখন তার দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছে এবং অপেক্ষা করছে ভ্যাটিকান থেকে আসা পরবর্তী ঘোষণার জন্য।