দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে একসময়কার রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। নানা জায়গায় মুখোমুখি অবস্থানে দেখা গেছে এই দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের। বিভিন্ন ঘটনায় সংঘর্ষও হয়েছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সংঘাতের কারণ
ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্ররাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে। অতীতে তারা একসঙ্গে কাজ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে নানান কৌশলগত ও আদর্শিক বিভাজনের কারণে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কয়েকটি প্রধান কারণে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত:
- রাজনৈতিক মেরুকরণ: বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে প্রভাব ফেলেছে। বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করায় ছাত্রদলও শিবিরের প্রতি কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই: বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ বিস্তারের জন্য দুই সংগঠনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যা সংঘর্ষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দোষারোপ: দুই সংগঠনের কর্মীরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দিচ্ছে, যা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
- বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব: অনেক সময় দেখা গেছে, একই দিনে দুই সংগঠন আলাদা কর্মসূচি ঘোষণা করছে, যা সরাসরি সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সংঘর্ষের সাম্প্রতিক ঘটনা
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সংঘর্ষ ও উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: গত মাসে ক্যাম্পাসে এক পদযাত্রার সময় ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রদল অভিযোগ করেছে, শিবিরের কর্মীরা তাদের সমাবেশে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, শিবির বলছে, ছাত্রদলই তাদের ওপর আক্রমণ করেছে।
- চট্টগ্রাম কলেজ: এখানেও দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় উত্তেজনা দেখা গেছে।
এই সংঘর্ষের বিষয়ে বিএনপি এবং জামায়াত উভয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে চাইছে না। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের রাজনীতি থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যা ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত করছে। অন্যদিকে, জামায়াত মনে করছে, বিএনপি তাদের প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করেছে এবং এখন দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে বিএনপি এবং জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি দুই দল দ্রুত কোনও সমঝোতায় না আসে, তাহলে এর প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতেও পড়তে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সংঘর্ষের ফলে সাধারণ ছাত্রদের শিক্ষার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে।
ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব শুধু দুটি সংগঠনের সমস্যা নয়, বরং এটি বড় রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। এ ধরনের সংঘাত শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট করছে এবং দলীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্ব কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে এবং দুই সংগঠনের মধ্যে সমঝোতার কোনও উদ্যোগ নেয় কি না।