যশোর, ২২ ফেব্রুয়ারি: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখাতেই জনগণের মুক্তি নিহিত রয়েছে। তিনি দাবি করেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস করেছে এবং দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেছে।
গতকাল যশোর ঈদগাহ ময়দানে যশোর জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন,
“আজ অনেকে রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলছেন, কিন্তু বিএনপি আড়াই বছর আগেই এ বিষয়ে জাতির সামনে ৩১ দফার রূপরেখা উপস্থাপন করেছিল।”
তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে এসেছে এবং জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বিএনপির ৭০০-র বেশি নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, হাজারো নেতাকর্মী গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মী গায়েবি মামলার আসামি হয়েছেন।
জনগণের মধ্যে ৩১ দফার সুফল পৌঁছানোর আহ্বান
তারেক রহমান বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন,
“আমাদের ৩১ দফার বাস্তবায়ন কীভাবে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে, তা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, ছাত্র, যুবসমাজ, নারীসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছানো জরুরি।”
তিনি দলের নতুন নেতৃত্বকে আহ্বান জানিয়ে বলেন,
“যশোর বিএনপির নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের প্রধান কাজ হবে জনগণের মধ্যে ৩১ দফার সুফল তুলে ধরা এবং রাষ্ট্র মেরামতের আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ত করা।”
ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে বিএনপির অবস্থান
তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। কিন্তু বিএনপি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়। তিনি বলেন,
“স্বৈরাচারী সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই আমরা বলেছিলাম—তোমরা দেশকে ধ্বংস করেছো, আমরা দেশকে গঠন করতে চাই।”
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্র মেরামতের এই রূপরেখা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দেশের জনগণ প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পাবে।
তারেক রহমানের বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি আবারও তাদের ৩১ দফার রূপরেখাকে জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপির এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে যশোর জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তাঁর ভাষণে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা এবং দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য ছিল রাষ্ট্র মেরামতের প্রয়োজনীয়তা এবং একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির সংগ্রাম।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে দুর্বল করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি তার ৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামতের একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরেছে, যা দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শাসনের কারণে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব বৃদ্ধি, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের ফলে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি যে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে, সেটিই বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির একমাত্র পথ। এই রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন
- বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
- দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা
- প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা
- বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
- অর্থনৈতিক সংস্কার ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি
বর্তমানে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত উত্তপ্ত। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক বিরোধ আরও গভীর হয়েছে। গত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলগুলো ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিএনপির দাবি, এই নির্বাচন ছিল একতরফা এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে, অনেকে গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর বিপরীতে, আওয়ামী লীগ সরকার বলছে যে তারা দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কাজ করছে এবং বিএনপি অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
বিএনপি’র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তারেক রহমান তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে, বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের কাছে যাবে এবং রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে ব্যাপক প্রচার চালাবে। তিনি বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মীকে জনগণের কাছে গিয়ে ৩১ দফা কর্মসূচির সুফল তুলে ধরার আহ্বান জানান।
যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে তারেক রহমানের বক্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যে ৩১ দফা রূপরেখার কথা বলেছেন, তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে বাস্তবিক অর্থে এটি কতটা সম্ভবপর হবে, তা নির্ভর করবে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।