জেলেনস্কি শক্তিশালী অবস্থান ছাড়াই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুদ্ধ পরিচালনা এবং রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “জেলেনস্কি আলোচনায় এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছেন, যেখানে তার হাতে কোনো শক্তিশালী কার্ড নেই।” বাইডেনের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ শুরু করে। সেই থেকে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধের কোনো সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না। প্রথম দিকে ইউক্রেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেও, সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। রাশিয়া তাদের সামরিক শক্তি ও কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে, যা ইউক্রেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে বিশাল পরিমাণ সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিলেও যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে যুদ্ধ একটি স্থবির অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখানে রাশিয়া ধীরে ধীরে ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল দখলে নিচ্ছে এবং ইউক্রেন প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে চলে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আরও অস্ত্র, আর্থিক সহায়তা এবং সামরিক প্রশিক্ষণ চেয়েছেন। কিন্তু বাইডেনের সাম্প্রতিক বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদে সমর্থন দিতে আগ্রহী নয়।
ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, “আমরা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চাই, তবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। জেলেনস্কির হাতে তেমন কোনো শক্তিশালী কার্ড নেই, যা দিয়ে তিনি রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পারেন।”
বিগত কয়েক মাসে রাশিয়ার সেনাবাহিনী বাখমুত, আভদিভকা, ক্রিমিয়া এবং ডনবাস অঞ্চলে ব্যাপক সামরিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ইউক্রেনের সেনারা কঠোর প্রতিরোধ চালালেও, অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকট তাদের দুর্বল করে তুলছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, “আমাদের সেনাদের মনোবল শক্তিশালী থাকলেও, অস্ত্রের ঘাটতি এবং পশ্চিমা সহায়তার ধীরগতি আমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে কঠিন করে তুলছে।”
রাশিয়া ইতোমধ্যে নতুন নতুন অস্ত্র সংযোজন করেছে এবং বেলারুশ ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পশ্চিমা সহায়তার ভবিষ্যৎ।
মার্কিন কংগ্রেসে বিভক্ত মতামত
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ইউক্রেনকে দেওয়া সহায়তা নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা বলছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যা যেমন মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” তাদের দাবি, “যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে, ইউক্রেনের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর।”
তবে ডেমোক্র্যাটদের একাংশ বলছেন, “যদি ইউক্রেনকে সাহায্য না করা হয়, তাহলে রাশিয়া আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে এবং ইউরোপের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।”
জেলেনস্কির বিকল্প কৌশল কী হতে পারে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, জেলেনস্কি এখন দুটি প্রধান পথ বেছে নিতে পারেন:
- পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে আরও সামরিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা – তিনি আরও অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক প্রশিক্ষণ চেয়ে আন্তর্জাতিক মহলে লবিং চালিয়ে যেতে পারেন।
- সম্ভাব্য আলোচনার পথ খোঁজা – যদিও এটি কঠিন, তবুও কিছু বিশ্লেষক বলছেন যে, যদি রাশিয়া নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মেনে নেয়, তবে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করা হতে পারে।
অনেক সামরিক বিশ্লেষক বলছেন যে, “এই যুদ্ধ দ্রুত শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।” রাশিয়া যদি দখল করা অঞ্চলগুলো ধরে রাখতে পারে এবং ইউক্রেন যদি পশ্চিমা সাহায্য অব্যাহত না পায়, তবে যুদ্ধের গতি আরও ধীর হয়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা এখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নতুন কৌশল নির্ধারণের চেষ্টা করছেন। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে পশ্চিমা বিশ্বের সিদ্ধান্তের ওপর।
জেলেনস্কির জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। যদি তিনি আলোচনার পথে যান, তবে তার শর্ত কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। অন্যদিকে, যদি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়, তবে ইউক্রেনকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
বাইডেনের মন্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, “যুদ্ধের সমাপ্তি সহজ হবে না, এবং জেলেনস্কির হাতে এখন তেমন কোনো শক্তিশালী কৌশল নেই।” এখন দেখার বিষয়, ইউক্রেন কীভাবে এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে তাদের পাশে দাঁড়ায়।