বাংলায় বখতিয়ার খিলজির আগমনকে বাংলা ভাষার আজাদী দিবস ঘোষণার দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে উদযাপিত হয়েছে ‘বাংলা ভাষার আজাদী দিবস’।
৩০-শে মার্চ, ২০২৩ রোজ- শনিবার(১৯ শে রমাদ্বান শরীফ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর সংলগ্ন ঐতিহাসিক শাহবাজ মসজিদ প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আলোচনার সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে অনুসন্ধিৎসু একদল তরুণ প্রজন্মের সংগঠন ‘শেকড় সন্ধানী’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।সভায় আলোচকগণ হিজরী সনের ১৯ রমজান তারিখকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বাংলা ভাষার আজাদী দিবস’ ঘোষণার দাবী জানান।
 শেকড় সন্ধানী’র আহবায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুহম্মদ আসাদুজ্জামান দিবসটির ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে আলোচনায় বলেন, মধ্যযুগে বাংলা ছিলো এ অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা।  কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদী সেন শাসকরা ক্ষমতা দখলের পর সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়, নিষিদ্ধ করে বাংলা ভাষাকে।  সেন শাসকরা প্রচার করে, “যে বাংলা ভাষায় কথা বলবে সে নরকে যাবে।  সাধারণ মানুষকে দেবতার ভাষা সংস্কৃতিতে কথা বলতে হবে।” এর মাধ্যমে সেন রাজারা বাংলা ভাষাকে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করে।  কিন্তু ৬০১ হিজরী সনের ১৯ রমজান তারিখে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি (রহমতুল্লাহি আলাইহি) সেন শাসক লক্ষণ সেনকে পরাজিত করেন বাংলাকে মুক্ত করেন।
এর ফলে শুধু ‘বঙ্গ বিজয়’ হয় না বরং সেন শাসকরা বাংলা ভাষায় কথা বলার উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো, তাও উঠে যায়।  অর্থাৎ বাংলা ভাষা আযাদী বা মুক্তি লাভ করে, সাধারণ মানুষ আবারো বাংলা ভাষায় কথা বলতে শুরু করে।  তাই এ দিনটি বাংলা ভাষার আজাদী’র দিন, যা সকল বাংলাভাষী মানুষদের জন্য খুবই স্মরণীয় একটি দিন।
মুহম্মদ আসাদুজ্জামান আরো বলেন, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত একটি মধ্যযুগীয় স্বর্ণমুদ্রা থেকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি (রহমতুল্লাহি আলাইহি) কর্তৃক বাংলা বিজয়ের দিন ৬০১ হিজরীর ১৯ রমজান বলে যানা যায়। ঐ সময় এ অঞ্চলে মাস গণনায় হিজরী সন প্রচলিত ছিলো, বাংলা বা গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার ছিলো না।  তাই হিজরী সন অনুসারে দিবসটি পালন অধিক যৌক্তিক। আলোচনায় শেকড় সন্ধানী’র সদস্য সচিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ‘বাংলা ভাষার আজাদী দিবস’ যদি না আসতো, তবে হয়ত আমরা এখন বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতাম না, নিজেদের বাঙালী বলে পরিচয় দিতে পারতাম না। অনেক প্রাকৃত ভাষার মত বাংলা ভাষাও হয়ত হারিয়ে যেতো। তাই এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। দিনটির গুরুত্ব অনুধাবন করে তাই আমরা এ দিনটি পালন করছি । আমরা চাই, আমাদের মত রাষ্ট্রীয়ভাবেও এ দিনটি পালন করা হোক।  ১৯ রমজান তারিখকে জাতীয়ভাবে ‘বাংলা ভাষার আজাদী দিবস’ ঘোষণা করা হোক।
আলোচনায় শেকড় সন্ধানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য, ঢাবি শিক্ষার্থী মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন, বর্তমান নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা নেই বললেই চলে।  আমরা আমাদের সংগঠন শেকড় সন্ধানীর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে বাঙালী জাতির শেকড়ে নিয়ে যেতে চাই। খুঁজে বের করতে চাই, আমাদের প্রকৃত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে।  মুহম্মদ মহিউদ্দিন রাহাত বলেন, ঐতিহাসিক ১৯ রমজান দিনটি উদযাপন তাই আমরা কোন হল বা অডিটোরিয়ামে না করে বেছে নিয়ে নিয়েছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থিত মুঘল স্থাপত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক নির্দশন শাহবাজ মসজিদ প্রাঙ্গণকে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে দোয়েল চত্বর সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৪শ’ বছর পুরাতন এমন একটি ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা আছে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানেন না।  আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম এসব ঐতিহাসিক নির্দশনগুলো সম্পর্কে জেনে তাদের শেকড়ের সন্ধান লাভ করুক। আলোচনা সভা শেষে প্রায় ৪শ’ অতিথিদেরকে নিয়ে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মিলাদ শরীফ শেষে দেশ, জাতি ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * বাংলা ভাষার আজাদী দিবস * বাংলায় বখতিয়ার খিলজি