চীনের ‘অসুরক্ষিত’ যুদ্ধবিমান চলাচল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার গুরুতর অভিযোগ
অস্ট্রেলিয়া চীনের বিরুদ্ধে আকাশপথে বিপজ্জনক ও ‘অসুরক্ষিত’ যুদ্ধবিমান চলাচলের অভিযোগ এনেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, দক্ষিণ চীন সাগরে টহলরত অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বিমানের খুব কাছাকাছি চলে আসে চীনা যুদ্ধবিমান, যা একটি সম্ভাব্য সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি করেছিল। এই ঘটনাটি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘটনার বিবরণ
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী (ADF) জানিয়েছে, একটি RAAF P-8A Poseidon সামরিক টহল বিমান আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় রুটিন অভিযানের সময় ছিল, তখনই একটি চীনা J-10 যুদ্ধবিমান অস্বাভাবিকভাবে তার সামনে চলে আসে এবং বিপজ্জনক গতিতে আচরণ করে। অস্ট্রেলিয়া দাবি করেছে যে চীনা যুদ্ধবিমানটি ইচ্ছাকৃতভাবে পাইলটকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল এবং এটি আকাশপথে নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন,
“আমাদের সামরিক বিমান আন্তর্জাতিক আইন মেনেই আকাশপথে চলাচল করছিল। চীনের এই বিপজ্জনক আচরণ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি পাইলটদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।”
অস্ট্রেলিয়ার সরকার এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং চীনকে তাদের সামরিক কার্যকলাপে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
চীনের পাল্টা বক্তব্য
চীন অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে, তাদের যুদ্ধবিমান জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছিল। চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়,
“আমাদের যুদ্ধবিমান আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় ছিল এবং অস্ট্রেলিয়ার সামরিক উপস্থিতি চীনের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি তৈরি করতে পারে। আমরা আমাদের আকাশসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।”
চীন বরাবরই দক্ষিণ চীন সাগরে পশ্চিমা সামরিক তৎপরতাকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং তাদের দাবি, এই অঞ্চলে বিদেশি শক্তির উপস্থিতি চীনের জন্য হুমকিস্বরূপ।
দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা
দক্ষিণ চীন সাগর দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। চীন এই সমুদ্রপথের বিশাল অংশের উপর নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করে, যা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চ্যালেঞ্জ করে আসছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এই অঞ্চলে চীনের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে সেখানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা আন্তর্জাতিক জলসীমায় টহল জোরদার করেছে, যাতে চীনের সামরিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়।
বিশ্লেষকদের মতামত
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি ভবিষ্যতে আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
- দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়তে থাকলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে সংঘর্ষ হতে পারে।
- অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তাই এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক প্রভাব বজায় রাখতে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
- চীন মনে করে, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক তৎপরতা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।
অস্ট্রেলিয়া ও চীনের সামরিক উত্তেজনা দক্ষিণ চীন সাগরে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। অস্ট্রেলিয়া তাদের সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, অন্যদিকে চীনও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছে।
বিশ্ব সম্প্রদায় এই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, কারণ দক্ষিণ চীন সাগরে যেকোনো সামরিক উত্তেজনা বৈশ্বিক রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।