হাতে হাতকড়া এবং পায়ে শেকল বাঁধা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে তাদের বহনকারী বিশেষ বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
রাত ২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রানওয়ে থেকে শেকল খুলে অ্যারাইভাল গেটে নেওয়া হয়। এ সময় কেউ তাদের কাছে যেতে পারেনি এবং কোনো ধরনের ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফেরত আসাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।
ইমিগ্রেশনের এক কর্মকর্তা জানান, বিমানটি রাত ১১টার পরপর অবতরণ করলেও তিন ঘণ্টা রানওয়েতে থাকার পর রাত ২টার দিকে তাদের হাতকড়া ও শেকল খুলে দেওয়া হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টিম, কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক তাদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য অর্থসহায়তা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের একাধিক দফায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ১৮০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, “উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ অভিবাসী হতে চায়, এটি স্বাভাবিক। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য সারা জীবনের ট্রমা হয়ে থাকে। আশা করি, ভবিষ্যতে মানবিক দিকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ফেরত পাঠানো হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারীদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এসব বাংলাদেশি মূলত মেক্সিকোসহ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর পথে বাংলাদেশি দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। জনপ্রতি তারা ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা খরচ করে।
এ ধরনের ফেরতের ঘটনা নতুন নয়। ২ আগস্ট নারীসহ ৩৯ বাংলাদেশিকে সি-১৭ সামরিক পরিবহন বিমান ব্যবহার করে দেশে আনা হয়েছিল, তাদের হাতকড়া ও শেকল ছিল। চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশি ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ২০১৬ সালে ২৭ বাংলাদেশিকে ফেরত আনার সময়ও একই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খবর আসে, যা তখন দেশে মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।

