নলছিটিতে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠিত
ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ফসল উঠে গেছে কৃষকের ঘরে। আমন ধানের মাঠ এখন ফাঁকা। সেই মাঠে বাঁশের সঙ্গে দড়ি বেঁধে তৈরি করা হয়েছে বৃত্তাকার পথ। দুই পাশে হাজারো মানুষ। কেউ বসা, আবার কেউবা দাঁড়িয়ে। মাঝখানে প্রাণপণ ছুটছে প্রতিযোগী ঘোড়া। ঘোড়ার পিঠে সওয়ারি। গতি বাড়াতে ঘোড়ার পিঠে পড়ছে চাবুকের ঘা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক ঘোড়া থেকে অন্য ঘোড়ার বাড়ে ব্যবধান। একসময় সব ঘোড়াকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় একটি ঘোড়া। মাঠভরা দর্শক সেই ঘোড়া ঘিরে মেতে ওঠে জয়োল্লাসে।
ঝালকাঠির নলছিটিকে আজ মঙ্গলবার হয়ে গেল ঐতিহ্যের এমন এক ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। বিলপাড়ার আমন ধান কাটার পর ফাঁকা মাঠে এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ‘নলছিটি উপজেলা প্রশাসন’। প্রতিযোগিতা দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল।
পৌষের বিকেলে হিমেল বাতাসের মধ্যেও মাঠে ভিড় করতে শুরু করে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। একে একে মালিক ও ঘোড়সওয়ার ঘোড়াগুলো নিয়ে মাঠে নামতে শুরু করলেন। সাদা, কালো, লাল—হরেক রঙের ঘোড়া।
এক সময়ে মানুষের বিনোদনের অন্যতম একটা মাধ্যম ছিল ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। কালের পরিক্রমায় যান্ত্রিক ও প্রযুক্তি নির্ভর বিনোদনের কারণে তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
দর্শক সুমন সিকদার জানান, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘোড়দৌড় দেখতে এসেছি। এখন নির্মল বিনোদন খুবই কম পাওয়া যায়। সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকে। আগে বিভিন্ন জায়গায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতাগুলো মানুষের মিলনমেলা পরিনত হতো। এখন এসব তেমন দেখা যায় না বললেই চলে। তবে আজকের আয়োজন অনেক সুন্দর ছিল। অনেক লোকজনেরও সমাগম হয়েছে।
খলিল হাওলাদার বলেন, আজকে এখানে এসে অনেক মানুষের মিলনমেলা দেখে খুব ভালো লাগছে। অনেক বাচ্চারাও এসেছে, আসলে তাদের একটু নির্মল বিনোদনের প্রয়োজন আছে। আমাদের ছোটবেলায় এসবই আমাদের অন্যতম বিনোদন ছিল। এখনতো খুব একটা দেখা যায় না। তবে মাঝে মাঝে এধরণের আয়োজন করা উচিত। আগের মতো স্থানীয়দের আয়োজনে করতে পারলে আরও ভালো হয়।
এসময় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতাকে ঘিড়ে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা তাদের খাবার ও অন্যান্য পণ্য নিয়ে হাজির হন। দর্শকদের প্রতিযোগিতা উপভোগের পাশাপাশি খাবার ও পছন্দের পণ্যক্রয় করতে দেখা যায়।
ঘোড়দৌড় উপভোগ করেন ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম ও নলছিটি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুস ছালাম। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ঘোড়ার মালিকের হাতে পুরস্কার তুলে জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।