শেখ হাসিনাকে কি ফেরত পাঠাবে ভারত?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্টে ভারতে আশ্রয় নেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। এদিকে জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে সম্প্রতি ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
এমন পরিস্থিতিতে ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার গভীর বিশ্লেষণমূলক অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড স্টোরি’তে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। গণমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি ভারতের বিবেচনার ওপর নির্ভর করছে। প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি চাইলে ঢাকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
চুক্তির মধ্যে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগ রয়েছে। তাই শেখ হাসিনাকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
শেখ হাসিনা ফেরাতে ঢাকার অনুরোধে নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়া কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি একটি বেশ জটিল প্রক্রিয়া।
এখানে রাজনৈতিক বিবেচনাসহ আরও কিছু বিষয় আছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কতটা নিরপেক্ষ, তা-ও ভেবে দেখবে ভারত। পাশাপাশি কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ও রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতের কাছে শুধু কূটনৈতিক পত্র দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়নি। সেটাও বিবেচনায় নেবে ভারত।
এ ছাড়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটা ন্যায়বিচার পাবেন—এ ধরনের নানা বিষয়ও আছে। একই প্রশ্নের জবাবে সোহেলা নাজনীন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়েছে, তাতে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগ রয়েছে। সাধারণত যেকোনো প্রত্যর্পণ চুক্তিতে এ ধরনের কিছু শর্ত থাকে। যেমন কোনো দেশ যদি মনে করে ফেরত পাঠানো ব্যক্তির ক্ষেত্রে সুষ্ঠু বিচার-প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে না, সে ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ কোনো দেশ প্রত্যর্পণ আহ্বানে সাড়া না–ও দিতে পারে। আর শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে ভারত কী করবে, তা ভারত সরকারই ভালো বলতে পারবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেই ট্রাইব্যুনালকে কতটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে শিরীন হক বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার আমলেই নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছিল। কিন্তু তা দূর করার জন্য তাঁর সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন তিন শেখ হাসিনা এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আশা করব, বিচারে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, অবাধ ও সুষ্ঠু বিচার হবে।’
প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে ভারত অতীতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণ করেছে উল্লেখ করে শিরীন হক বলেন, শেখ মুজিব হত্যা মামলার আসামি আবদুল মাজেদকে ফেরত পাঠিয়েছিল নয়াদিল্লি। যেহেতু অতীতে অভিযুক্তদের ভারত প্রত্যর্পণ করেছে, তাই দেশটি এবারও ঢাকার প্রত্যর্পণের অনুরোধে সাড়া দেবে।
নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সম্প্রতি বলেছে, বাংলাদেশ যত দিন মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করবে না, তত দিন দিল্লিকে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীসভার অন্য সদস্যদের আশ্রয় দিতে হবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এমন মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে শিরীন হক বলেন, তারা বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বাতিল চেয়েছে। মামলা যেমনই হোক, তিনি নিজেও সব ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। তবে শেখ হাসিনা বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।