চসিকের মার্কেট ও দোকানগুলোর ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হবে : চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চসিককে ঠকিয়ে যেসব ভূমি ও স্থাপনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাতিল করার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেছেন, চসিকের মার্কেট ও দোকানগুলোর ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হবে। বন্দর থেকে ১ শতাংশ হিস্যা পেতে কাজ করছি। এছাড়া, বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো থেকে ট্যাক্স আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতেও কাজ করছি।’

সোমবার (২৫ নভেম্বর) নগরীর টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়কদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

সভায় ছাত্ররা চট্টগ্রাম নগরীকে ক্লিন, গ্রিন এবং হেলদি সিটি হিসেবে গড়তে মেয়রকে সহায়তার আশ্বাস দেন। এ সময় তারা নগরজুড়ে খেলার মাঠের সুবিধা বৃদ্ধি করা, বিপ্লব উদ্যানকে অবাধ বাণিজ্যিকীকরণ থেকে রক্ষা করে নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া, চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নগরজুড়ে যে সমস্ত নালা উন্মুক্ত রয়েছে সেগুলো ওপর স্ল্যাব নিশ্চিত করা, শহরজুড়ে ভেঙে যাওয়া সড়কগুলোকে সংস্কার করা, চাঁদাবাজি-দখলবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আগ্রাবাদ মোড়ে অবৈধ হকার উচ্ছেদ করা, নগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা, কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধ করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, চট্টগ্রামের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, মাদকবন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের যে ১১ জন শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের একজন করে সদস্যর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, হয়রানিমূলক মামলা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণসহ বেশকিছু দাবি রাখেন।

ছাত্রদের দাবির কথা তুলে ধরে চসিক মেয়র বলেন, ‘আপনারা যেসব দাবি জানাচ্ছেন সেগুলোর অধিকাংশ শপথের পরপরই চট্টগ্রামে আসার পর বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ইতোমধ্যে পাহাড়তলীর শেখ রাসেল শিশু পার্কের নাম পরিবর্তন করে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণের ঘোষণা দিয়েছি।’

নগরীর ৪১ ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা নগরীর ৪১ ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ গড়ে তুলবো। কারণ আমি দেখেছি শিশুদের খেলার অধিকার নিয়েও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। টার্ফ গড়ে উঠার কারণে অস্বচ্ছল ঘরের ছেলেরা খেলতে পারছে না। এ কারণে আমার ইচ্ছা প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিশুদের খেলার মাঠে ফেরাতে পারলে মাদক সমস্যা, কিশোর গ্যাং কমে আসবে। এছাড়া, আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, জিয়া শিশু পার্ক, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্সও নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। বিপ্লব উদ্যানে গিয়েছি, সেখানে একটা স্ট্রাকচার করা হচ্ছিল; সেটি ভেঙে দিয়েছি। সরাসরি বলে দিয়েছি-বিপ্লব উদ্যানে গ্রিন পার্ক হবে এবং সেখানে বিপ্লব উদ্যানের যে ঐতিহাসিক ভূমিকা সেটি সম্পর্কে কিছু স্মৃতিফলক থাকবে।’

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আগস্ট মাসের যে গণহত্যা হয়েছে, সে গণহত্যায় শহীদদের আমি শ্রদ্ধা জানাই। আন্দোলন চলাকালে আহতদের আমি আমার দুটি হসপিটালে (ট্রিটমেন্ট-হলি হেলথ) চিকিৎসা দিয়েছি। ৫ আগস্টের পরে প্রায় প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে আমি নিজে গিয়েছি আহতদের দেখতে। চোখের সমস্যা, গুলিবিদ্ধ, হামলার শিকার অনেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে।  আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে যথাসাধ্য সেবা দেয়ার, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’

নগর সরকার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘নগর সরকার নাই চট্টগ্রামে। এ বিষয়ে কেউ কথা বলছে না। আমি একা কথা বলছি। নগর সরকার ছাড়া পরিকল্পিত উন্নয়ন শুধু চট্টগ্রামে না সারা বাংলাদেশে অসম্ভব। সবগুলো সেবা সংস্থা যদি সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কাজ না করে তাহলে কখনো পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব না। জলাবদ্ধতার প্রকল্প নিয়েও বৈষম্য হয়েছে। যে প্রকল্প চসিক করার কথা সেটা করছে সিডিএ। এখন এ প্রকল্প শেষ হলে হ্যান্ডওভার করবে চসিককে। কিন্তু এ প্রকল্প কীভাবে সচল রাখা যায়, কীভাবে এগুলোর ব্যয় নির্বাহ হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।’

পরিচ্ছন্ন বিভাগের কাজের তদারকিতে ছাত্রদের সহায়তা চেয়ে মেয়র বলেন, ‘ছাত্ররা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন বিভাগের যে কার্যক্রম চলছে; তা ঠিকমতো হচ্ছে কি না তা তদারকি করতে পারে। ডেঙ্গু ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করতে পারে ছাত্ররা। এছাড়া স্থানীয় যেকোন সমস্যা আমাকে জানালে আমি সমাধানের উদ্যোগ নিব।’

‘মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজ মুক্ত একটা নিরাপদ শহর তৈরি করতে চাই; যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একটা নিরাপদ শহরে থাকতে পারি। এই কনসেপ্ট এর জন্য তোমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমি চাই যেখানে সন্ত্রাস হবে, চাঁদাবাজি হবে, যে করুক তোমরা সেখানে দাঁড়িয়ে যাবে।’ প্রয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদসহ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও প্রতিনিধিরা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
বিষয়: * চসিক মেয়র * চসিকের মার্কেট ও দোকানগুলোর ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হবে