উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি :
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক(নিজ বেতনে) মো:কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বিধি বহির্ভূতভাবে পদ পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠেছে। চাকরিতে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন কর্মস্থলে সে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তার অপকর্মের নানা কাহিনী।
অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম জেলার শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের দুবুলিয়া গ্রামের আমিন উদ্দিনের পুত্র । বর্তমানে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩১ জুলাই গভর্নমেন্ট হেলথ্ সার্ভিসে দৌলতপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্টোর কিপার (১৪ গ্রেড) পদে যোগদান করেন কামরুল ইসলাম। চাকরির শুরুতে সেখানে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ নিয়ে ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর হাসপাতাল কর্মচারীদের পক্ষে সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাসহ কামরুলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১২টি অনিয়ম দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেলে তাকে মুন্সিগঞ্জের টংগীবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। শাস্তি স্বরুপ বদলিতেই সীমাবদ্ধ থাকেন কামরুল। নতুন কর্মস্থলেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
এদিকে,২০২১ সালের ১০ নভেম্বর সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন কামরুল। নিয়োগবিধি ১৮ অনুযায়ী পদোন্নতি আছে কিন্ত পদ পরিবর্তনের কোনে বিধান না থাকলেও নিয়ম বহির্ভুতভাবে তাকে প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক ( নিজ বেতনে) পদায়ন করা হয়। বর্তমান কর্মস্থলেও তার বিরুদ্ধে ওঠেছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ১২ জন নার্স পদায়নের পর অনলাইনে তাদের বেতন নির্ধারণ করতে হাতিয়ে নেন ৪৮ হাজার টাকা।এছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স মজিরনের কাছ থেকে অন্যত্র বদলির তদবিরে নেন ২ লাখ টাকা। বিষয়টি প্রকাশ পেলে মজিরনের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন তিনি। অন্যদিকে,অবসরে যাওয়া চতুর্থ শ্রেনীর ২ স্টাফের পেনশনের কাজ করে দিয়ে আদায় করেন প্রায় লাখ টাকা। সর্বশেষ সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় শ্রেণির কোয়ার্টার যমুনায় স্বপরিবারে বিনাভাড়ায় বসবাস করার বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে কানাঘুষা । এ ছাড়া হাসপাতাল স্টাফদের সাথে কামরুলের অসদাচরণে অনেকটাই অতিষ্ঠ তারা। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযুক্ত প্রধান সহকারী কাম হিসাব- রক্ষক মো. কামরুল ইসলাম নিজ বেতনে পদায়নের কথা স্বীকার করে বলেন, পদ পরিবর্তনেরও বিধান আছে। ২০১৯ সালে দুদকে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে জানান, ওগুলো শেষ হয়েছে। অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে অফিসে এসে সাক্ষাতে কথা বলে লাইন কেটে দেন ।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.সৈয়দা তাসনুভা মারিয়া বলেন,পদ পরিবর্তনের বিষয়টি আমি এ কর্মস্থলে যোগদানের আগে হয়েছে। সেটা অধিদপ্তরের বিষয়। আগের কর্মংস্থলে কামরুলের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়েরের কথা শুনেছি। এখানেও আমার কাছে কিছু অভিযোগ এসেছে। হাসপাতাল কোয়ার্টারে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যতটুকু জানি ভাড়া দিয়েই থাকেন। তারপরেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।