শিরোনাম
ছাত্রলীগ নেত্রী ভারতে যাওয়ার পথে বেনাপোলে আটক   » «    ক্যাম্পাস সংস্কার বাদ দিয়ে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনে ব্যস্ত পবিপ্রবি প্রশাসন   » «    ১৬ বছর পর দেশে ফিরছেন যুবদল নেতা আবু সাইদ   » «    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজার আখতারুজ্জামানকে শো-কজ   » «    ভ‍্যাট ব‍্যবস্থা বিলুপ্ত করুন; সেবা ও পন্যের ওপর আরোপিত কর অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন :এবি পার্টি   » «   

আড়ত মালিক কর্তৃক ব্যবসায়ীদের উপর হামলা ও মালামাল লুটের প্রতিবাদে ৩ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ


সৈয়দপুর, নীলফামারী প্রতিনিধি:

 

নীলফামারীর সৈয়দপুরে আড়ত মালিক কর্তৃক ব্যবসায়ীদের উপর হামলা, মারধর ও মালামাল লুটের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করেছে ভুক্তভোগীরা। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের সৈয়দপুর বসুনিয়াপাড়া বাইপাস মোড় সংলগ্ন সৈয়দপুর কাঁচা আড়ত পাইকারী সবজি বাজারের সামনে এই অবরোধ করা হয়। এতে প্রায় ৩ ঘন্টা যাবত রংপুর দিনাজপুর মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এর ফলে উভয় পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হয় হাজার হাজার যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।

অবরোধকারীদের অভিযোগ, সকালে সৈয়দপুর কাঁচা আড়ত পাইকারী সবজি বাজার থেকে মালামাল নিয়ে যাওয়ার পথে রাবেয়া মোড় এলাকায় কুন্দল ব্রিজ সংলগ্ন সম্প্রতি স্থাপিত বিসমিল্লাহ আড়ত নামের নতুন পাইকারী সবজি বাজারের মালিক পক্ষ তাদের পথরোধ করে। এসময় আড়তের মালিক পক্ষের লোক সিরাজুল, সালাহ উদ্দিন ও গোল্ডেন সৈয়দপুর পৌর কাঁচা আড়ত তথা পাইকারী সবজি বাজার থেকে মালামাল কেন নেয়া হয়েছে তা জানতে চায় এবং তাদের আড়তে কেনাকাটার জন্য জবরদস্তি করে। এতে ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, আমরা যেখানে সুবিধা পাবো এবং আমাদের যেখানে ইচ্ছে সেখান থেকে মালামাল কিনবো তাতে আপনারা বাধা দেওয়ার কে আর কেনই বা এভাবে পথরোধ করেছেন।

এর প্রেক্ষিতে বিসমিল্লাহ আড়তের লোকজন ব্যবসায়ীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অতর্কিত চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা ব্যবসায়ীদের ভ্যান থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এতে বাধা দিতে গিয়ে আড়ত মালিক পক্ষের আঘাতে ৫ জন ব্যবসায়ী জখম হয়। খবর পেয়ে সৈয়দপুর পৌর কাঁচা আড়ত পাইকারী সবজি বাজারের লোকজন এগিয়ে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এর মধ্যে হৃদয় নামে একজন গুরুত্বর আহত হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘামলার শিকার ব্যবসায়ী জয়দেব চন্দ্র রায় বলেন, বিসমিল্লাহ আড়তের মালিক মূলতঃ ডাব্লু শাহ নামে এক ব্যক্তি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কুন্দল এলাকায় ওই আড়ত গড়ে তুলেছেন। কিন্তু সেখানে ব্যবসায়ীরা যেতে না চাওয়ায় তার সহযোগি সিরাজুল ও সালাহ উদ্দিন প্রায়ই ওই পথে আসা-যাওয়ার সময় ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তাদের দাবি এপথে অন্য কোন আড়তে যাওয়া যাবেনা। তাদের আড়তেই কেনাকাটা করতে হবে। তাদের এমন অযৌক্তিক আবদারে রাজি না হওয়ায় তারা আজ পরিকল্পিতভাবেই কয়েকজন ব্যবসায়ীর উপর হামলা চালিয়েছে। প্রতিদিনের মত আজও সকাল ৯ টায় পৌর কাঁচা আড়ত পাইকারী সবজি বাজার থেকে মালামাল কিনে নিয়ে যাওয়ার পথে তারা আমাদের পথরোধ করে এবং প্রতিবাদ করায় মারধর করে এবং আমার ভ্যান থেকে ৫ বস্তা কাঁচা মরিচ লুট করে নিয়ে যায়। যার মুল্য প্রায় ৪২ হাজার টাকা।

আরেক ব্যবসায়ী রায়হান আলী বলেন, পৌর কাঁচা আড়ত তথা পাইকারী সবজি বাজার থেকে ৩৩ হাজার ৭শ’ টাকার ৭ বস্তা আলু কিনে নিয়ে সৈয়দপুর শহরের পৌর সবজি বাজারে যাওয়ার সময় কুন্দলে সম্প্রতি গড়ে তোলা বিসমিল্লাহ আড়তের মালিক সিরাজুলসহ তার সহযোগি সালাহ উদ্দিন ও গোল্ডেনের নেতৃত্বে লোকজন আমাদের আটকিয়ে মারধর করাসহ মালামাল লুট করে। এসময় হৃদয় নামে আমাদের এক ব্যবসায়ী খুবই জখম হয়েছেন। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। জানিনা এখন তার অবস্থা কি।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর এলাকার আড়তদার আবু আলম ৫ বস্তা আলু নিয়ে যাওয়ার পথে তাকেও আটক করে মারপিট করাসহ তার মালামাল কেড়ে নিয়ে গেছে ওই আড়ত মালিক পক্ষ। সেই সাথে সাহিন নামে পার্বতীপুর উপজেলার ব্যবসায়ীর ১২০ বস্তা বীজ আলুও একই সময় লুট করা হয়েছে। তারা বলেন, আমরা ব্যবসায়ী যেখানে সুবিধা পারো সেখান থেকে মাল কিনবো। কিন্তু নতুন করে গড়ে তোলা বিসমিল্লাহ আড়তের লোকজন জোরপুর্বক তাদের আড়ত থেকে মাল কিনতে চাপ দিয়ে আসছে। আমরা তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় তারা এভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে আমাদের মালামাল লুট করে আমাদেরকে মারধর করে আহত করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

পৌর কাঁচা আড়ত তথা পাইকারী সবজি বাজারের একতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল মোাহাম্মদ আজম বলেন, সম্পূর্ণ প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে বৃহৎ এই আড়ত থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দুরুত্বে বিসমিল্লাহ আড়ত তৈরী করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আড়ত করে তারা নিজেরা সুবিধাভোগী হতে চায়। আর আমরা সমিতিগতভাবে আড়ত করায় এই সমিতির সকল সদস্য ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সমভাবে লভ্যাংশ পাচ্ছেন। তাছাড়া এই আড়ত অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কেনাকাটা করে লাভবান। নতুন আড়ত গড়ে তোলার আগে থেকেই একটি কুচক্রি মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই সন্ত্রাসী হামলা ও লুট করেছে তারা। আড়ত মালিক ডাব্লু শাহের নির্দেশেই এমনটা করা হয়েছে। আইনগতভাবে এর সুবিচার দাবি করছি।

সৈয়দপুর থানার এস আই আঙ্গুর বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে অবরোধকারীরা দোষিদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী জেলা পুলিশ সুপার স্যারের সাথে কথা বললে তিনি বিচারের আশ^াস দেন। এর প্রেক্ষিতে অবরোধকারীরা তাদের অবরোধ তুলে নেয়। ফলে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

অন্যদিকে বিসমিল্লাহ আড়তের গোল্ডেন বলেন, আমরা কোন হামলা বা লুট করিনি। বরং তোফায়েল আজমরাই আমাদের আড়তে আসা-যাওয়ার পথে ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানী করে আসছে। আজ সকালেও একনজ সিএনজি চালককে মালামালসহ আটক করেছে এবং তার মাল গায়েব করে দিয়েছে এখন নাটক সাজিয়ে উল্টো আমাদের উপর মিথ্যে অভিযোগে দায় চাপাচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

উল্লেখ্য, শহরের ভিতরে আড়ত থাকায় মালামাল পরিবহনে অতিরিক্ত যানবাহন প্রবেশের ফলে চরম যানজটের সৃষ্টি হওয়াসহ নানা অসুবিধা দেখা দেয়। একারণে আড়তটি শহরের বাইরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় ১০ বছর আগে সৈয়দপুর শহরের পৌর সবজি বাজারের আড়ত মালিকদের সমিতি কর্তৃক পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক বাইপাসের পাশে প্রায় ১০ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয় পৌর কাঁচা আড়ত তথা পাইকারী সবজি বাজার। এসময় শহরের সবজি বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী শহরের ভিতর থেকে আড়ত অপসারণের বিরোধিতা করে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী নতুন স্থানেই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে এবং এখন ওই আড়তটি পরিপূর্ণভাবে জমজমাট হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি আগের বিরোধিতাকারীরা একব্যক্তিকে দিয়ে কুন্দল ব্রিজ এলাকায় বিসমিল্লাহ নামে আরেকটি আড়ত গড়ে তুলেছেন। কিন্তু সেখানে ব্যবসায়ীরা যেতে না চাওয়ায় তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতাদের প্রভাবে চাপ সৃষ্টি করাসহ নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এধরণের হামলা, মারধার ও মালামাল লুটের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে আহত ব্যবসায়ীদের সাথে পৌর কাঁচা আড়ত তথা পাইকারী সবজি বাজারের অন্যান্য আড়তদার ও পরিচালনাকারী একাতা সমিতির কর্তৃপক্ষ মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে মহাসড়কে চমর যানজটের সৃষ্টি হয় এবং ৩ ঘন্টায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাজার হাজার মানুষকে। সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরোধকারীদের বিচারের আশ^াস প্রদানের মাধ্যমে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান ঘটে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
বিষয়: * আড়ত মালিক কর্তৃক ব্যবসায়ীদের উপর হামলা ও মালামাল লুটের প্রতিবাদে ৩ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ * শাহজাহান আলী মনন
সাম্প্রতিক সংবাদ