আগাম জাতের রোপা আমণ ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে,লালমনিরহাটের কৃষক
।
লালমনিরহাটে শুরু হয়েছে আগাম জাতের রোপা আমণ ধান কাটার মহোৎসব। রোপা আমণের ফসল ঘরে তুলতে বর্তমান ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে। এর ফলে একই জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষকরা।
গত মৌসুমে প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ১২০০- ১৩০০টাকা। তবে ধানের বাজার শুরুতেই ভালো থাকায় খুশি কৃষকরা । ধানের বাজার আরও বাড়বে এমনটা প্রত্যাশাও করছেন তারা।
কৃষক মন্ডল মিয়া(৩৫) জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ বছর আমনের উৎপাদন নিয়ে খুবই আশঙ্কায় ছিলাম। তবে এবার ফলন আশানুরূপ ভালি হয়েছে। পোকা-মাকড়ের তেমন উৎপাতও ছিল না। মোট কথায় বলা যায় ধানের ফলন মোটামুটি ভালো।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বিঘা জমি থেকে আমি প্রায় ১৫ মণ ধান পেয়েছি । এ বছর বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৮ -১০ হাজার টাকা। সার ও অন্যান্য কীটনাশকের দাম বাড়ার পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। তাই আশা করছি, কয়েকদিন পর ধানের দাম আরও বাড়বে।
জেলা সদরের দুরাকটি বাজারের ধান ব্যবসায়ীরা বলেন, হাটে নতুন ধানের তেমন সরবরাহ নেই। ধানের দাম কমার তেমন কোন আশংকাও নেই। তবে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তিনি আরো বলেন, এখন অধিকাংশ কৃষকই বাড়ি থেকে ধান বিক্রি করে। ধান ব্যবসায়ীরাও কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে ন্যায্য মূল্যে ধান কিনছেন। বর্তমানে আমরা প্রতি মণ ধান ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত কিনছি।
কিছু দিন আগে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে জেলার বেশ কিছু এলাকায় পাকা ও আধাপাকা ধানের গাছ গুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছিল কিন্তু ধানের দানা গুলো শক্ত হয়ে যাওয়ায় নুয়ে পড়া ধান গাছগুলোর তেমন ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই বলে জানিয়েছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন।
গতকাল বিকেলে আদিতমারীর উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক হাসমত আলী দুলালমিয়া (৪০) বলেন, ধানের বর্তমান বাজার খুবই সন্তুষ্ট জনক ।এ বছর ১৫বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি ৪ বিঘা জমির ধান ঘরে তুলেছি বাকি ১১ বিঘা জমির ধান ১০-১৫ দিনের মধ্যে কাটা মাড়াই শুরু করবো। আবার ধান কাটা শেষ হলেই সেই জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ এবং তামাক চাষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
একই ইউনিয়নের কৃষক ছিদ্দীক ( ৪৬) বলেন, মৌসুমের শুরুতেই, সময় মতো বৃষ্টি এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য মৌসুমের ন্যায় এবারও মোটামুটি ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ধানের মান অনুযায়ী প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা পযন্ত। তিনি আরো বলেন, আমরা এবার আগাম রোপা আমনের চাষ করেছি। এ ধানের ফলন আর দামও সন্তুষ্ট।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, আমন চাষ শুরুর পর থেকেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুই ফসলী বা তিন ফসলী জমিগুলোতে কিভাবে ধানের ফলন ভালো হবে সে ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এবার জেলায় ৮৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আগাম ধানের চাষা হয়েছে । তবে ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান এবার আগাম কাটা হয়েছে।
এবার আমন ধান চাষে বাড়তি কিছু খরচ করতে হয়েছে কৃষকদের। তবে ধানের ফলন ভালো হওয়ায় সন্তুষ্ট কৃষক।