জাতীয় পার্টি নিয়ে রাজনীতিবিদদের ভাবনা

গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একেবারেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রায় আড়াই মাস পর আওয়ামী লীগের মিত্র এই দলটির কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত রাজনীতি করতে পারবে কি-না, তা নিয়ে দলের নেতারা চিন্তিত৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত পনেরো বছর আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে রাজনীতি টিকিয়ে রেখেছিল জাতীয় পার্টি। এখন জাতীয় পার্টির ওপর ভর করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার একটা শঙ্কাও রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিগত সময়ে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের পরামর্শে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ও ভারত জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করতে পারে হয়তো ছাত্রদের মধ্যেও এমন একটা আশঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে”।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আওয়ামী লীগ তৎপর হওয়ার জন্য নানা চেষ্টা চালাচ্ছে। ফেসবুকে তারা খুবই সরব। বিভিন্ন জায়গায় বিছিন্ন ঘটনাও ঘটছে। সে জায়গা থেকে কেউ কেউ হয়তো মনে করছে জাতীয় পার্টিকে তারা ব্যবহার করছে বা করতে পারে”।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাসুম বিবিসি বাংলাকে সেই শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ টিকে থাকার জন্য জাতীয় পার্টিকে সামনের দিকে রাখতে চাচ্ছে, বিষয়টা এমনই হতে পারে।

ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মনে করি নিষিদ্ধ হবে বিচারের মাধ্যমে৷ তবে তার আগে আমরা জাতীয় পার্টির কার্যক্রম স্থগিত করার দাবি জানিয়েছি সরকারের কাছে৷”

বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি)-এর সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘‘জাতীয় পার্টি একটি স্বৈরাচারি দল৷ তাদের জন্ম স্বৈরাচারি কায়দায়৷ আর তারা স্বৈরাচারকে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে৷ এই দলটি সম্পর্কে দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা রাজনীতি করতে পারবে কী পারবে না৷”

গণ অধিকার পরিষদের প্রধান নুরুল হক নুর বলেন, ‘‘আমরা কোনো ধরনের হামলা, সহিংসতা ও মব জাস্টিসকে সমর্থন করি না৷ আমরা মনে করি, এখন একটা সরকার আছে৷ সেই অবস্থায় যদি এরকম করা হয় তাহলে দেশে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা হবে৷ আর জাতীয় পার্টি অফিসে কারা হামলা করেছে, নিজেরাই করেছে কি-না তার তদন্ত হওয়া দরকার৷” তিনি বলেন, ‘‘তবে যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর এবং সহযোগী ছিলো তাদের নিষিদ্ধের দাবি জানাই আমরা”।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘দেশের কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বিএনপি৷ দেশে অযথা ইস্যু তৈরি করে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে৷ বাংলাদেশকে ঘিরে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে৷ এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশের জনগণকে সজাগ থাকতে হবে৷”

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র শ্রমিক জনতা’ ব্যানারে আয়োজিত মশাল মিছিলে বক্তারা বলেন, আপনারা জানেন আওয়ামী লীগ সরকার জুলাই মাসে সারা দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হলেও জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ দোসরদের পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে। বাংলার মুক্তিকামী জনতা তা কখনোই মেনে নেবে না।

সুত্র: বিবিসি বাংলা

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * জাতীয় পার্টি নিয়ে রাজনীতিবিদদের ভাবনা
সর্বশেষ সংবাদ