নবীগঞ্জে ডাকাতির ৩ ঘন্টার মধ্যেই লুন্ঠিত সকল মালামাল উদ্ধার, ৪ ডাকাত গ্রেপ্তার
নবীগঞ্জে ডাকাতি সংগঠিত হওয়ার ৩ ঘন্টার মধ্যেই লুন্ঠিত সকল মালামাল ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত নোহা গাড়িসহ ৪ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকী ডাকাতদের ধরতেও অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার ২ অক্টোবর গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। উক্ত ডাকাত চক্রটি গ্রেফতার হওয়ায় জনমনে স্বস্তি এসেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর ব্রাম্মনগ্রাম এলাকার মৃত আজমান আলীর পুত্র মোঃ সৈয়দুর রহমান (৩০), ওসমানীনগর থানার সৈয়দপুর গ্রামের জফির মিয়ার পুত্র মোঃ সামসুদ্দিন (২৯), নবীগঞ্জ উপজেলার পারকল (বনগাঁও) এলাকার নুরুল মিয়ার পুত্র মোঃ উজ্জল হোসেন (২১) ও একই গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের পুত্র মোঃ রেফু মিয়া (২৪)।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার তড়াইল থানার ৩নং দলা ইউনিয়নের সেকন্দরনগর গ্রামের আব্দুল মজিদের পুত্র মোঃ এনায়েতুল ওরফে এনাতুল বেপারী (৩৮) একজন গরু ব্যবসায়ী। তিনি বগুড়া, ঝিনাইদহ এবং সিলেটের জৈন্তাপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গরু ক্রয় করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন
এলাকায় ক্রয়-বিক্রয় করেন।
গত ১ অক্টোবর সকালে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর বাজার হতে গোয়াইনঘাট থানার নয়ামাটি এলাকার আলা
উদ্দিনের পুত্র এমাজ উদ্দিন ও শাপরান (র.) থানার মোতারামের চক এলাকার মখলীছ আলীর পুত্র আতিক মিয়ার মাধ্যমে তরিক আহমদ নামে একজনের থেকে বিভিন্ন সাইজের ৬টি ডেকা বাছুর ক্রয় করেন। যার মূল্য ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা এবং হাসিল ৬ হাজার টাকা। হানিফ আহমদের কাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের ৪টি ডেকা বাছুর (মূল্য ১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা ও হাসিল ৪ হাজার টাকা)। কবির বেপারীর কাছ থেকে ৭টি ডেকা বাছুর (মূল্য ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা ও হাসিল ৭ হাজার টাকা)। নিয়ামত বেপারীর কাছ থেকে ৫টি ডেকা বাছুর (মূল্য ২ লক্ষ ১২ হাজার ৫ শত টাকা ও হাসিল ৫ হাজার) টাকা। হানিফ ব্যাপারীর কাছ থেকে ৬টি ডেকা বাছুর (মূল্য ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ও হাসিল ৬ হাজার টাকা। আলী আহমদের নিকট থেকে ৫টি ডেকা বাছুর (মূল্য ২ লক্ষ টাকা ও হাসিল ৫ হাজার টাকা)।
কালা মিয়ার কাছ থেকে ৬টি ডেকা বাছুর (মূল্য ২ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা ও হাসিল ৬ হাজার টাকা) সহ মোট ৩৯টি গরু ডেকা বাছুর (মুল্য ১৬ লক্ষ ৫ হাজার ৫ শ টাকা ও সর্বমোট হাসিল ৩৯ হাজার টাকা) ক্রয় করে গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে ভাড়াকৃত ট্রাক (রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-১১১৫) এর চালক রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি থানার উজানপাড়া এলাকার মোঃ অলিউর ইসলামের পুত্র মোঃ রব্বানী, একই থানার মাটিকাটা গ্রামের সাইদুর রহমানের পুত্র হেলপার সোহান মিয়া, গোয়াইনঘাট থানার নয়ামাটি এলাকার আলা উদ্দিনের পুত্র এমাজ উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল থানার সেকন্দরনগরের আব্দুল করিম ভ‚ইয়ার পুত্র মোঃ হাবুল ভূঁইয়া ও একই এলাকার মদন আলীর পুত্র মুস্তাকিমসহ ট্রাক যোগে ক্রয়কৃত ডেকা গরুর বাছুরগুলো নিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়নের মডেল বাজার সংলগ্ন ব্রীজের সামনে পৌছামাত্র একটি সাদা রংয়ের নোহা গাড়ী ও দুইটি মোটর সাইকেল নিয়ে ট্রাকের সামনে ব্যারিকেড
দিয়ে ১২-১৩ জন ডাকাত ট্রাক চালক রব্বানী, হেলপার সোহান ও গরুর গাড়ীতে থাকা এমাজ উদ্দিন, মোঃ
হাবুল ভূঁইয়া ও মুস্তাকিমদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রাক থেকে নামিয়ে তাদের বহনকৃত নোহা
গাড়ীতে তুলে মারপিট করে এমাজ উদ্দিনের নিকট থেকে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা এবং মোঃ রব্বানী, সোহান
মিয়া, এমাজ উদ্দিন, মোঃ হাবুল ভূঁইয়া, মুস্তাকিমগন প্রত্যেকের নিকট থাকা বিভিন্ন কোম্পানীর পাঁচটি মোবাইল ফোন (মূল্য প্রায় ১৮ হাজার টাকা) ও গরু ব্যবহৃত ট্রাকটি (মূল্য প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা) ডাকাতি করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হলে এসআই স্বাধীন চন্দ্র তালুকদারকে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ) রেজাউল হক খান এর দিক
নির্দেশনায় ডাকাতির মাত্র ৩ ঘন্টার মধ্যেই নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: কামাল হোসেন পিপিএম এর নেতৃত্বে এসআই স্বাধীন চন্দ্র তালুকদার ও এসআই/পিযুষ কান্তি দেবনাথসহ একদল পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নের টোলপ্লাজার সামন থেকে ডাকাতদেরকে গ্রেফতার করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ওসি মোঃ কামাল হোসেন পিপিএম বলেন, ডাকাতির ঘটনায় ৩ ঘন্টার মধ্যেই
লুন্ঠিত সকল মালামালসহ ৪ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তারা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত
থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। বাকীদের ধরতেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।