শিবগঞ্জে ১৩’শ হেক্টর ফসলি জমি, ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাড়ে ৩৫ হাজার মানুষ পানি বন্দি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
গত কয়েকদিন ধরে বেড়ে চলেছে পদ্মা, মহানন্দা ও পাগলা নদীর পানি। পানি বৃদ্ধির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৩’শ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেই সাথে ৬টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ৮’শ টি পরিবারের ৩৫ হাজার ৫৩০জন মানুষ ও ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানি বন্দি রয়েছে। ফলে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলার উজিরপুর, পাঁকা, দুলর্ভপুর, ঘোড়াপাখিয়া, ছত্রাজিতপুর, মনাকষা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ৬টি ইউনিয়নের ১ হাজার ২৯২ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং প্রায় ৬ হাজার ৬২৫ জন কৃষকের মাসকালাই, রোপা আউশ, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, চিনা, আখসহ সবজি নষ্ট হতে বসেছে।এদিকে, তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, দূর্লভপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ এলাকায় ৭ হাজার ৪১৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ ও পানি বন্দি রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পাঁকা ইউনিয়নে ৭৫০টি, উজিরপুর ইউনিয়নে ১২৮টি, মনাকষা ইউনিয়নে ৩৪৫টি ও ঘোড়াপাকিয়া ইউনিয়নে ১৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ ও পানি বন্দি রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীতে ২১ দশমিক ২৭ মিটার পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে এবং বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ২২ দশমিক ৫ মিটার, মহানন্দা নদীতে ১৯ দশমিক ৪ মিটার স্তর রেকর্ড করা হয়েছে এবং বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ২০ দশমিক ৫ মিটার। এ ছাড়া পূর্ণভর্বা নদীতে পানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৮০ মিটার এবং বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ২১ দশমিক ৫৫ মিটার।পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বলেন, গত কয়েকদিন থেকে পানি বৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চলের প্রায় ৯৮ ভাগ পরিমাণ জমির মাসকালাই ডুবে যাওয়ায় নষ্ট হতে বসেছে। এছাড়া অত্র ইউনিয়নের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানি বন্দি হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে প্রতি নিয়ত। এছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে ইউনিয়ন পরিষদের চারপাশে পানি চলে আসায় ইউপি ভবনও পানি বন্দি রয়েছে।
পাঁকা ইউনিয়নের কৃষক রফিক, রবিউল, বাইরুলসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে জমিতে মাষকলাই বীজ বুনেছিলাম। হঠাৎ করে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের সব জমির মাসকালাই ডুবে গেছে। এত আমাদের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যা ভোগান্তির মধ্যে। এছাড়া মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া, তারাপুর,ঠুঠাপাড়া, হাঙ্গামী ও শিংনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করায় মাসকালাই চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুনাইন বিন জানান বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার টি ইউনিয়নে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে উপজেলার ১২’শ ৯২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষদিগ্রস্থ হয়েছে মাসকালাই চাষিরা। যার মধ্যে ১২’শ ৫০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৬২৫জন মাসকালাই চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এছাড়া ২০জন আঁখ চাষি, ৩২জন গীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষি, ২০ চিনা চাষি, ২০০জন সবজি চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে পানি বাড়ছে, তবে তা এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে। গেল কয়েকদিনের তুলনায় গত ২৪ ঘন্টায় পানি বেশি বাড়েনি। তবে, গত ২৪ ঘন্টায় ৫ সে.মি. পানি বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আজ ও আগামীকাল কিছুটা পানি বাড়তে পারে। তবে পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নীচে থাকবে। তারপরের দিন থেকে পানি কমতে শুরু করবে আশা করা যায়।
এদিকে, উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ৮ হাজার ৮’শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি দূর্লভপুর ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ এলাকায় ৭ হাজার ৪১৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ ও পানি বন্দি রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পাঁকা ইউনিয়নে ৭৫০টি, উজিরপুর ইউনিয়নে ১২৮টি, মনাকষা ইউনিয়নে ৩৪৫টি ও ঘোড়াপাকিয়া ইউনিয়নে ১৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ ও পানি বন্দি রয়েছে। আমার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের খোঁজখবর নিচ্ছি এবং তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছি। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।