কাউনিয়ায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপরে
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে আজ রোববার তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি আর উজানের পানি ঢলের কারনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে তিস্তা। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সঙ্গে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে্র মাছ।
ইতিমধ্যে বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নের হরিচরণ শর্মা, আজমখাঁ, হয়বত খাঁ, বিশ্বনাথের চর, চরগনাই, ঢুষমারা, চর রাজিব, গোপিঙ্গা, গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, তালুক শাহবাজপুরসহ চরাঞ্চলে অস্থায়ীভাবে পানিবন্দি হয়েছে কিছু পরিবার।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দুপুরের দিকে পানি সামান্য কমলেও সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি আবারো বাড়বে। তাই চরাঞ্চলবাসীকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাই এখন যে যার স্থানে দায়িত্ব, সেই স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
গদাই গ্রামের আবুল হোসেন ও আলামিন জানান, নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে আমরা ভাঙ্গন আতংকে আছি, পানি কমতে শুরু করলেই ভাঙ্গন শুরু হবে। ইতো মধ্যে অনেক বাড়ি-ঘর ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পাঞ্জর ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সহিদুল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ে আবার কমে। হামার এত্তি ভাঙন দেখা দিছে। ঘরবাড়ি নিয়ে অনেক বিপদে আছি। এ্যালা পানির জন্তে কোনটেও যাবার পারো না।
একদিকে পানি বাড়ে, আরেকদিকে আবার ভাঙতেছে। এই বানোত ঘরবাড়ি টিকবার পামো কিনা আল্লায় জানে।তিস্তা নদীর একটি শক্তিশালী বাঁধ দিলে হামার এমন অবস্থা হইল না হয়।
বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনসার আলী বলেন, রাতের মধ্যে পানি বেড়েছে। তবে কোনো বৃষ্টি হয়নি। এরপরও নদীপারের মানুষজনকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে।
পাউবোর রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, পানি বাড়লেও এই পানি নেমে যাবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নদীর পানির সমতল হ্রাস পেয়ে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মহিদুল হক বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়েকদফা মিটিং করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সাথে সবসময় কথা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ত্রাণ বিতরণসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের সাথে কথা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহ হচ্ছে। যা রাতে আরো বাড়বে। তাছাড়া পানি বাড়ায় তিস্তা সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে রাস্তা ঘাট, ব্রীজ ভেঙে না যায় সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে।