বাগেরহাটে লায়লা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
বাগেরহাটের মোল্লাহাট লায়লা আজাদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম, দূর্র্নীতি, ঘুষ বানিজ্যসহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ইচ্ছা খুশিমত এ ধরনের বে-আইনী কাজ করে যাচ্ছেন অত্র প্রতিষ্ঠান প্রধান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিভাবক ও এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন।
অভিযোগকারিরা জানান, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বিভিন্ন কারনে দূর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তারা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত থেকেও তাদের কার্যক্রম ছিল সম্পূর্ন আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীর মত। মোল্লাহাট লায়লা আজাদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান কোন ভাবেই এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। দূর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের কারনে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে দূর্নীতিবাজরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছে কেউবা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান প্রতিষ্ঠানের এমন কোন জায়গা নাই যেখানে তিনি অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এত কিছু করবার পরেও তিনি তার কাজ অব্যহত রেখে প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সঠিক তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক বলেন, ২০১৫ সালে নিয়োগের পর থেকেই দূর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগ করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। উচ্চতর স্কেল পরিবর্তনের জন্য ৩ লক্ষ টাকা ঘুষ। ৯ বছর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের প্রাপ্য টিউশন ফি না দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ। ৯ বছরে বার্ষিক পরীক্ষা, টেস্ট পরীক্ষা, অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা, ভর্তি ফি ফরম পুরন বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ আয় করেছে। ২০২৪ সালেই টেস্ট পরীক্ষার সময় আয় করেছে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানের জমির লিজ বাবদ প্রতি বছর ৩০ হাজার টাকা করে ৯ বছর কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৫ সালে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান নিয়োগের সময় ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লক্ষ টাকা প্রদান করে পরবর্তীতে ভূয়া ভাউচার দিয়ে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করে। অধ্যক্ষ তৎকালীন বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলালকে খুশি করতে প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা করে নিয়ে ২ লক্ষ টাকা খরচ করে সোনার নৌকা উপহার দেয়।
আরো জানান, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান প্রতিষ্ঠানে উন্মুক্ত পরীক্ষায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বডি চেঞ্জ করে পরীক্ষা দেওয়ায়। অনেকে বিদেশে থেকেও পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করেও সার্টিফিকেট পেয়েছে তার প্রমান রয়েছে। কলেজে ২০২০ সাল থেকে একদিনও কলেজে না এসে অধ্যক্ষের সাথে যোগসাজোসে সহকারি কাম কম্পিউটার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বেতন নেয়।
কলেজের সহকারি লাইব্রেরির আব্দুল আলিম যথা সময়ে কলেজে না এসে বড়ঘাট বাজারে তার সার- বীজ এর দোকান পরিচালনা করে। কলেজের পিয়ন রফিকুল ইসলাম ১০ থেকে ১২ বছর কখনোই কলেজে আসেনা তার পরেও তার বেতন কিভাবে তার একাউন্টে যায় এটা অভিযোগ কারিরা জানতে চান।
অভিযোগকারীরা আরো বলেন, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এমন কোন অনিয়ম নেই যে তিনি করেননি। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের সাথে সক্ষ্যতা গড়ে তুলে নির্দ্ধিধায় করে গেছেন সকল অপকর্ম, দূর্নীতি ও অনিয়ম। তাই তার মত একজন দূর্নীতিবাজ কোন ভাবেই এ প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারে না। তাই তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা ভিত্তিহীন। একটি মহল নিজেদের সার্থস্বিদ্ধির জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। সঠিক তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান।