শান্তিগঞ্জে ত্রিশ গ্রামের দুঃখের নাম নোয়াখালী-ভীমখালী সড়ক
ভোগান্তিতে ত্রিশ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ
দ্রুত কাজ শুরুর আশা এলজিইডির
যাত্রী-চালকের আতঙ্কের নাম এই সড়ক
জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ত্রিশটি গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থলপথ হচ্ছে নোয়াখালী টু ভীমখালী সড়ক। উপজেলাগুলোর প্রায় ত্রিশটি গ্রামের সাধারণ মানুষের অন্যতম বড় দুঃখের নাম এখন ১০ কিলোমিটারের এই সড়কপথ। আর্শ্বিাদের এই সড়কটি ভাঙতে ভাঙতে এখন অভিশাপ কিংবা দুঃখ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সড়কটির একাধিক স্থানে এমনভাবে ভেঙেছে যে দেখলেই মনে হয় সড়কটিতে যেনো মৃত্যুর ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। এসব ভাঙনে ইতোমধ্যে একাধিকবার ছোট বড় সড়ক দূর্ঘটনা ঘটলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। সড়কটির বেশ কিছু স্থান ভালো থাকলেও ভাঙনাংশের কারণে ভালোর কৃতিত্ব যেনো নিমিষেই মলিন হয়ে যায়। রোগী, বয়োবৃদ্ধ, শিক্ষার্থীসহ সব ধরণের যাত্রীদের জন্য এই সড়কটি এখন ভোগান্তির অন্যতম কারণ। রাস্তাটিতে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের আতঙ্কের নামও নোয়াখালী টু ভীমখালী সড়ক। বড় বড় ভাঙা থাকার কারণে কম দূরত্বের সড়কে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নোয়াখালী টু ভীমখালী সড়কে প্রবেশ মুখেই বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙা। এখানে এই রাস্তায় চলাচলকারী সিএনজি, মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখা হয়। রাস্তা ভাঙা ও ছোট হওয়ার কারণে প্রবেশ মুখে প্রায় সময়ই যানজট সৃষ্টি হয়। সামনের কিছু জায়গা ভালো থাকলেও তেরহাল গ্রামের ব্রিজের দুই পাশে চরমভাবে ভাঙা। ব্রিজে উঠা-নামা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। জিবদারা বাজার পর্যন্ত যাওয়ার আগে আরও দুথএক জায়গায় ছোট ছোট ভাঙনের দৃশ্য চোখে পড়ে। জিবদারা পার হয়ে মুর্তাখাই পয়েন্ট, উকারগাঁও ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে, মুর্তাখাই ব্রিজ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ৩টি বড় বড় ভাঙন রয়েছে। এছাড়াও এই রাস্তার আরও বেশ কিছু জায়গায় ছোট ছোট ভাঙন রয়েছে। যা অতিদ্রুত সংস্কার করা না হলে বড় ধরণের ভাঙনের সৃষ্টি হবে।
স্থানীয়রা জানান, তিন উপজেলার তেরহাল, নূরপুর, জিবদারা, কেশবপুর, হরিপুর, উকারগাঁও, মুর্তাখাই, চাঁনপুর, ঢালাগাঁও, ক্ষিধিরপুর, রামেশ্বরপুর, কাঁঠইল্যা, হাসনাবাজ, ভীমখালী, খামলাবাজ, বিচনা নয়াগাঁও, কলক্তা, মিলিকপুর, থলেরবন্দ, আক্তাপাড়া, ভান্ডা, মাখরখলা, গাজীপুর, কুতুবপুর, মির্জাপুর, লালুখালী, মুরাদপুরসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের চলাচল এই সড়ক দিয়ে। যদিও দশ কিলোমিটার পথের কথা উল্লেখ করা হয় তবে এই পথ ব্যবহার করে সুনামগঞ্জ সদর ও জামালগঞ্জ উপজেলায় অবাদে চলাফেরা করেন এই এলাকার গ্রামবাসী। এখানে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পরিষদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। কোনো গর্ভবতী মহিলাকে বা মুমূর্ষু রোগীকে এই রাস্তা দিয়ে বহন করার কোনো উপায় নেই। একবার একটি বড় ধরণের দুর্ঘটনার হাত থেকে একজন গর্ভবতী মহিলা রক্ষা পেয়েছে। এই রাস্তায় গাড়ি চালান প্রায় ২শথ জন সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালক। তাদেরও চরম ভোগান্তি হয় এই পথে।
জিবদারা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুমন আহমদ বলেন, এই পথে চলাচল করতে আমাদের খুবই অসুবিধা হয়। রাস্তাটি বন্যার পানিতে ভেঙে গিয়েছিলো। সরকার আর ঠিক করেননি। রাস্তাটির ভাঙা অংশ ঠিক করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
উকারগাঁও গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি আসকুন নূর বলেন, এই রাস্তায় চলাচল করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। কিছু জায়গা ভালো আছে কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় এমন ভাবে ভেঙেছে যে চলাচলের কোনো উপায় নেই। এই এলাকার একজন মহিলাকে গর্ভবতী অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ঝাঁকুনিতে ব্যথা উঠে। এমন বিপদ সংকুলান পথ পাড়ি দিতে হয়েছে এই মহিলাকে।
পরিবহণ শ্রমিক আতিকুর রহমান, স্বাধীন মিয়া ও পাবেল আহমদ বলেন, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও টমটমসহ এই সড়কে প্রায় ২শথজন শ্রমিক গাড়ি চালান। তাদের পরিবারের রুটি-রুজি হয় সড়কে যাত্রী বহণ করে। রাস্তা প্রচণ্ডভাবে ভাঙা থাকার কারণে সপ্তাহান্তে গাড়িতে কাজ করাতে হয়। ভাঙা অংশে যাত্রী নামাতে হয়। বাধ্য হয়ে দশ কিলোমিটার পথে আমাদেরকে ভাড়া বেশি নিতে হয়। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার জোর দাবি করছি।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থর নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, রাস্তাটি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ। রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শুরু হবে।