কাওয়ালি সংগীতের উৎপত্তি কীভাবে?

কাওয়ালি হলো প্রাচ্যের সংগীতের একটি প্রাচীন ধারা। দক্ষিণ এশিয়ায় উদ্ভব হওয়া এক প্রকার সুফি ইসলামী আধ্যাত্মিক প্রেম বিষয়ক ভক্তিমূলক গান। ভারত ও পাকিস্তানে ১৩ শতকে কাওয়ালির আবির্ভাব ঘটে। মূলত সুফি-সাধকরা ঈশ্বরের প্রেমে মশগুল হয়ে এই গান করেন।

ইসলামী সুফিবাদের অনুসারীরা পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভর না করে গুরুর থেকে শিক্ষা গ্রহণে বিশ্বাসী। সুফি ইসলামী আখ্যানের ওপর ভিত্তি করে রচিত এই গানগুলো শুরুতে পাঞ্জাবের আশপাশের সুফিদের মাজারগুলোতে একটি আধ্যাত্মিক সংগীত হিসেবে পরিবেশন করা হতো। পরে নুসরাত ফতেহ আলী খান এবং সাবরি ব্রাদার্সের মতো বড় নাম কাওয়ালিকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং বাণিজ্যিক রূপ দেয়।

কাওয়ালি ফার্সি, উর্দু, হিন্দিসহ আরও নানা স্থানীয় ভাষায় রচিত হতো। বাংলা ভাষায়ও কাওয়ালি গান রচিত হয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের হাত ধরেই বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় এই সংগীতের এই ধারাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ধারণা করা হয় উর্দু ‘কওল’ থেকে কাওয়ালি শব্দটির উৎপত্তি। কওল-এর আভিধানিক অর্থ হলো বলা। এখানে নবী রাসুল সম্পর্কিত কথা বলাকেই নির্দেশ করা হয়েছে।

প্রত্যেক কাওয়াল প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে দরগা ও খানকাহের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তারা ওরসে যায়, প্রতি মাসে সেখানে পরিবেশনা করতে হয়। সব জনপ্রিয় কাওয়ালদের উত্থান হয়েছে এমন দরগা ও খানকাহ থেকেই।

পাকিস্তানের বিশ্বখ্যাত কাওয়ালি শিল্পী নুসরাত ফতেহ আলী খানের পরিবার গত ৮০০ বছর ধরে বাবা ফরিদ উদ্দিন গঞ্জে শকরের মাজারের সঙ্গে যুক্ত। বলতে গেলে প্রতিটি উদীয়মান কাওয়ালের সংগীত ক্যারিয়ার শুরু করার আগে মাজারে গান করা এক প্রকার বাধ্যতামূলক।

দ্বাদশ শতাব্দীর সুফি সাধক বাবা ফরিদ উদ্দিন গঞ্জ শকরের সমাধিতে তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত ভিড় জমায়।

নুসরাত ফতেহ আলী খানের ভাগ্নে, ওস্তাদ মাহবুব ফরিদ আকরাম খান মাজারে কাওয়ালি পরিবেশনা করতে গিয়ে বিবিসিকে বলেন, আমরা এখানে পারফর্ম করে বড় হয়েছি, এখনো নতুন সংগীত রচনা বা নতুন কিছু করার আগে আমরা এই সাধকের অনুমোদন নেই। বাবা ফরিদ সেই যোগসূত্র যা আমাদের সবাইকে আবদ্ধ করে।

কাওয়ালির গুরুত্বপূর্ণ নামগুলোর শুরুতেই নুসরাত ফতেহ আলী খানের নাম আসবে এতে কোন বিতর্ক নেই। কাওয়ালির গুরুত্বপূর্ণ নামগুলোর শুরুতেই নুসরাত ফতেহ আলী খানের নাম আসবে এতে কোনো বিতর্ক নেই। বিখ্যাত সুফি গায়ক আমীর খসরুকে এই ধারার সংগীতের প্রবর্তক বলা হয়। তিনি ছিলেন নিজামুদ্দিন আউলিয়ার শিষ্য।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * কাওয়ালি * প্রাচ্যের সংগীতের একটি প্রাচীন
সর্বশেষ সংবাদ