ঢাকা খুলনা হাইওয়ে এক্সপ্রেস ওয়ের শিবচরে ট্রমা সেন্টারটি কাজে আসছে না
মাদারীপুর:
ঢাকা – খুলনা হাইওয়ে এক্সপ্রেস ওয়ের সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য মাদারীপুরের শিবচরে সন্যাসীরচরে নির্মাণ করা হয় ট্রমা সেন্টার। গত দুই বছর আগে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় আহতরা এই ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্ঘটনা আহতদের চিকিৎসা সেবার জন্য দূরের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে মারা যাচ্ছে পথেই।
তবে চিকিৎসাসেবা দিতে না পাওয়ার কারণ ও রয়েছে ট্রমা সেন্টারটি চালুর জন্য যে জনবলের প্রয়োজন, তার পদ সৃষ্টি করা হয়নি আজ পর্যন্ত। ফলে অবকাঠামো থাকলেও চিকিৎসাসেবা চালু হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১২ কোটি টাকা। কিন্তু ট্রমা সেন্টার নিয়ে স্থানীয়রা যে আশা রয়েছিলেন,তা আজো আলোর মুখ দেখেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদ সৃষ্টির কোনো অনুমোদন না থাকায় অবকাঠামো নির্মাণ শেষেও চালু করা সম্ভব হয়নি। ৫ আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ট্রমা সেন্টারটি আদৌ চালু হবে কি না,তা নিয়েও শঙ্কায় স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ট্রমা সেন্টারে সাতজন পরামর্শক চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট), তিনজন অর্থোপেডিকস সার্জন, দুজন অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ), দুজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন চিকিৎসক,১০ জন নার্স এবং ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ানসহ ৩৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রমা সেন্টারের প্রধান ফটকের ভেতর স্থানীয়রা ধান,পাটসহ নানা কাজে ব্যবহার করছেন এই ১২ কোটিটাকার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটি । চারপাশ আগাছায় ভরা। হাসপাতালের ফটক তালাবদ্ধ। ভেতরেও নোংরা পরিবেশ। বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র,এসি নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
অন্য দিকে এক্সপ্রেসওয়ের পাশেই নির্মাণ করা ট্রমা সেন্টারটিতে চিকিৎসাসেবা চালু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এই রুটে চলাচলরত পরিবহনচালক ও যাত্রীরা।
শিবচর হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে এক্সপ্রেসওয়েতে ১৩৫টিদুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া অংশে ৭২টি দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৬৪ জন; আহত হয়েছে ৭৮ জন, মামলা হয়েছে ৫৭টি এবং জিডি ১৫টি। জাজিরা-ভাঙ্গা অংশে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত ও ৯৪ জন আহত হয়েছে: মামলা হয়েছে ৫৭টি এবং জিডি ১৫টি। আহতদের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এক্সপ্রেসওয়ের পাশের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে নেওয়া হয়। ট্রমা সেন্টারটি চালু না হওয়ায় এখান থেকে কোনো সেবাই পাচ্ছে না দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা। কামরুল নামের এক গাড়িচালক বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রমা সেন্টার থাকা খুব জরুরী বলে মনে করি। কারণ, যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনায় একজন আহত রোগীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা ফরিদপুর নিতে হয়। স্থানীয় হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহতদের উন্নত চিকিৎসা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে ট্রমা সেন্টার থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করি। এখানকার ট্রমা সেন্টারের সবই হলো, কিন্তু চালু হলো না।’
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘হাসপাতালটি উদ্বোধন হয়েছে দুই বছর হলো। এখনো চালু হয়নি। এখন রক্ষণাবেক্ষণের লোকও নেই জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। আমরা দ্রুত হাসপাতাল চালুর দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহম্মেদ খান বলেন, ‘আসলে শুধু অবকাঠামো হলেই তো হবে না। এখানে জনবলের বিষয় রয়েছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয় যুক্ত। অর্থনৈতিক বরাদ্দ না থাকলে জনবল নিয়োগ হয়। না। আমরা জনবলের চাহিদার প্রস্তাব দিয়েছি, হয়তো অনুমোদন হবে। তবে কবে হবে, তা বলা যাচ্ছে না।’
স্থানীয়রা জানান, নির্মাণকাজ শেষে যখন উদ্বোধন করা হয়, তখন সবকিছু সাজানো-গোছানো ছিল। এরপর আর কেউ আসেনি। এখন মাদকসেবীদের আড্ডাসহ নানা ধরনের অপ্বরীতিকর ঘটনাও ঘটে এখানে। রাতে পুরো ট্রমা সেন্টার অরক্ষিত থাকার কারণে বেশি সমস্যা হয় ।