মনগড়া এতিমের তালিকা করে মাদ্রাসার প্রধান লুটপাট করেছে লাখ লাখ টাকা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় বেসরকারি এতিমখানায় অধিকাংশ ভূয়া এতিম শিশু দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছেনা পাওয়ার কি আছে ইয়া অভিযোগ রয়েছে এসব মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর মা-বাবা থাকলেও পিতার মৃত সনদ দেখিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের এতিম পরিচয়ে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ লুটপাট করছে বলে অনেক অভিভাবকদের অভিযোগ।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রেমতে জানায়ায়, রাণীশংকৈল উপজেলায় ১৯টি বেসরকারি এতিমখানা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ভরনিয়া হাট গোরস্থান আশরাফুল উমুল নূরানী হাফেজিয়া ক্বওমী মাদ্রাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিং এর শিক্ষার্থীদের পিতার ভুয়া মৃত্যুর সনদ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করেছে এমন অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার প্রধান মহতামিম মোজাফফর ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
সনদ সম্পর্কে জানতে চাইলে ধর্মগড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ইউসুফ ও খালেদার পিতা আব্দুল খালেক নামক ব্যক্তির মৃত সনদ পত্রটি তার সাথে ব্ল্যাকমেইল করে সই নিয়েছে মাদ্রাসার মহতামিম মোজাফফর । কিন্তু ভিন্ন কথা কথা বলছে মাদ্রাসার মহতামিম তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ইউসুফের মা বলেছিলো ইউসফের পিতা আব্দুল খালেক মারা গেছে।তাই এমন কথা শুনে আমি ইউসুফের পিতার মৃত সনদটি নিয়েছি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে।কিন্তু স্থানীয়রা ধারণা করছেন সমাজসেবা কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে তিনি নিয়ম বহিরভুত ভাবে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে আসছেন। শিক্ষার্থী ইউসুফ এবং খালেদা বলছে তার বাবা আব্দুল খালেক এখনো জীবিত রয়েছে,কিন্তু তাদের মাদ্রাসার হুজুর শিখিয়ে দিয়েছেন যেন বাবা মারা গেছে বলতে।
শিক্ষার্থী ইমন বলছে, মিথ্যা কথা শিখানো হতো তাদের। ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক তাদের বলতেন কোন সাংবাদিক তোমাদের বাবা-মা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলবে বাবা মারাগেছে। ইমনের পিতা বলেছেন, মাদ্রাসার বোর্ডিং এ থাকা কালিন প্রতিমাসে ১২’শ টাকা মাদ্রাসার প্রধানকে দিতেন। শিক্ষার্থী হেদাই’র পিতা মিজানুর রহমান বলেন, এতিম ও দুস্থ তালিকায় তার সন্তানকে দেখানো হয়েছে। অথচ তিনি জানেন না । তিনি বলেন, প্রতিমাসে হেদায়ের বেতন দেওয়া হয় ১৭-১৮’শ টাকা। শিক্ষার্থী বাদলের মাতা চাঁনতারা বেগম বলেন, মাদ্রাসায় প্রতিমাসে ১৮-২ হাজার টাকা বেতন দিতেন। অথচ এতিম ও দুস্থ তালিকায় দেখানো হয়েছে বাদলকে। ভরনিয়ার হাট গোরস্থান হাফিজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিং’র মহতামিন মোজাফফরের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ করছেন অভিভাবকগণ। এভাবে নিজের মনগড়া এতিমের তালিকা তৈরী করে সমাজসেবা অফিসে জমা করার পর হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
অপরদিকে রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ পীরনাছেরিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা লিল্লাহ বোডিং ও ইসলামিয়া শিশু সনদ। ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত এতিমখানা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মিজানুর রহামন বলেন, মাদ্রাসার আবাসিকে থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে থাকে। তিনি বলেন আবাসিকে থেকে খাওয়া দাওয়া করে । এখান থেকে নেকমরদ আলিমুদ্দীন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করে শিক্ষার্থীরা। মোট শিক্ষার্থী ৩৫ জন, তার মধ্যে ১৫ জনের ক্যাপেটিশন পান প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিনে পাওয়া গেছে ৬ জন শিক্ষাথী। জানতে চাইলে মাদ্রাসাটির প্রধান বলেন, মাদ্রাসায় আবাসিক অনাবাসিক ছাত্র রয়েছে। অনেকে ছুটিতে রয়েছে। তাই উপস্থিতি কম। এপ্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে দাতব্য প্রতিষ্ঠান। মাদ্রাসার সঠিক শিক্ষার্থী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখার চেষ্টা করেন। মাদ্রাসার প্রধান এতিমের সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হন।
এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় সে জন্য সঠিক তালিকা তৈরী করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা। এছাড়াও উপজেলার এসব মাদ্রাসাগুলোতে প্রায় এতিম শিক্ষার্থী একেবারে কম।
তবে সচেতন মহলের দাবী,এ প্রতিষ্ঠান গুলোকে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে তাই এতটা তলিয়ে দেখে না।কিন্তু প্রতিটি এতিমখানা মাদ্রাসার এসব দুর্নীতি ক্ষতিয়ে দেখা উচিৎ তাহলেই এ জঘন্যতম কাজ গুলো করতে ভয় পাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ।
এবিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিমের নিকট ভিডিও সাক্ষাৎকার চাইলে তিনি বলেন, ডিডি স্যারের লিখিত অনুমতি নিয়ে আসেন তা ছাড়া কোন ধরনের ভিডিও সাক্ষাৎকার দিবেন না তিনি।এ কর্মকর্তার এমন একটি অডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে ইতিমধ্যে।
তবে উল্টো কথা বললেন ঠাকুরগাঁও সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) আল-মামুন তিনি বলেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সঠিক উত্তর দেননি। ভিডিও সাক্ষাৎকার দিতে ডিডির লিখিত অনুমতি লাগে না।
তিনি আগেও শুনেছেন রাণীশংকৈল উপজেলার ভরনিয়ার হাট কবরস্থান যে এতিমখানাটি আছে, ওখানে নাকি একাধিক নিবাসী আছে যাদের বাবা আছে অথচ তাদের মৃত সনদ দেখিয়ে এতিম দেখানো হচ্ছে এবং এবিষয়ে তারা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট নিচ্ছে। তিনি দুঃখের সাথে জানান, যাদের নামে ক্যাপিটেশন নিচ্ছে তারপরেও না কি তাদের কাছে মাদ্রাসা প্রধান বেতন নিচ্ছেন। তিনি বলেন খুব শীঘ্রই সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।