৫ দফা দাবীতে হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শাট ডাউন চলছে

 

হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিনিধি: 

 বাংলাদেশে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিদ্যমান সকল বৈষম্য দূরীকরণ ও অতিসত্বর সংস্কারের লক্ষ্যে হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল, বগুড়ার সকল শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকবৃন্দ ৫ দফা দাবি পেশ করেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রোজ বৃহস্পতিবার থেকে একাডেমিক সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন, কর্ম বিরতি, বৈষম্য দূরীকরণ ও সিস্টেম সংস্কার আন্দোলন, ক্যাম্পাসে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। অবিলম্বে বৈষম্য দূরীকরণ ও সিস্টেম সংস্কারের জন্য  ৫ দফা দাবি জানিয়েছে।

 ৫ দফা দাবি হলো:

১. দ্রুত সময়ে অত্র কলেজের প্রিন্সিপাল সংকট সমাধান ও কলেজের অভ্যন্তরীণ সকল সংকট নিরসন।

২.বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও কাউন্সিল গঠন।

৩. দ্রুত সময়ে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের সরকারি চাকরির নিয়োগ বিধি প্রণয়ন এবং পিএসসির ক্যাডারভুক্ত করণের মাধ্যমে নিয়মিত নিয়োগ।

৪. ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ব্যবস্থাকরণ ও ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক মানোন্নয়ন।

৫. উপরোক্ত সকল দাবি গুলোর সাথে হামদর্দ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ- কে সমর্থন ও সহযোগিতা করতে হবে।

 উপরোক্ত দাবীগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠাতা ড. হাকীম মো: ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন (রাসেল) স্যার কে স্বশরীরে অত্র কলেজে উপস্থিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

তারা বলেন, ছাত্র জনতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের প্রতিটি খাতকে সংস্কারপূর্বক ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। সাম্যতার ভিত্তিতে সকলের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।। কিন্তু স্বাস্থ্য খাত দেশের সর্বাধিক দুর্দশাগ্রস্ত খাতগুলোর একটি। আর স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থা বা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি চরম বৈষম্যের শিকার। প্রাচীন ও প্রাকৃতিক। এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গুলোর পরতে পরতে রয়েছে বহুমুখী সমস্যা। দেশের সকল জনগণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণে দেশে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় বহুমাত্রিকতা যোগ করতে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থা হতে পারে কার্যকরী সমাধান।

তারা আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা মতে বিশ্বের প্রায় ৮৫% মানুষ এখনো প্রাকৃতিক বা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির সেবা গ্রহণ করে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির গুরুত্ব ও প্রযোজনীয়তা অনুধাবন করে বিশ্বের প্রতিটি দেশের নিজস্ব চিকিৎসা ব্যবস্থা গুলোকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও মূল্যায়ন পরিচালনা করে। রোগীরা সঠিক ও নিরাপদ চিকিৎসা পেতে পারে, ঔষধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হয় সেই লক্ষো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রচলিত এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয় করে।

এছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিভিন্ন বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির নিরাপদ ব্যবহার এবং মানসম্মত প্রাকটিস সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করে এবং মাননির্ধারণ ও ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন প্রণয়ন, নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করে, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য বিকল্প ও আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে, যাতে তারা রোগীদের সঠিক তথ্য প্রদান ও রোগ নিরাময়ে সক্ষম হন। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) গৃহীত উপরের সকল কার্যক্রম, নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা প্রসার, দক্ষ চিকিৎসক গড়ে তোলার জন্য ১৯৮৯ সালে সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১৩ নাম্বারে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে হামদর্দ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ দুইটি ইউনানী মেডিকেল কলেজ এবং হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনানী ফ্যাকাল্টি গড়ে তোলে। এই প্রতিষ্ঠান গুলো প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে দক্ষ চিকিৎসক গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান গুলোর সাবেক ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী মেডিকেল অফিসার হিসাবে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে নিরলস সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে কয়েক হাজার চিকিৎসক জনসেবায় নিয়োজিত রয়েছে। স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা প্রাপ্তি, উচ্চ কার্যকরীতার হার, নূন্যতম পার্শপ্রতিক্রিয়া ও নিরাপদ হওয়ায় ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের নিকট দ্রুত জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, বাংলাদেশে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন ও কাউন্সিল না থাকা, পিএসসি’র অধীনে ক্যাডারভুক্ত হয়ে নিয়মিত সরকারি কর্মসংস্থান না হওয়া, দীর্ঘ দিন থেকে স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ না থাকায়, সরকারি এবং বেসরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল গুলোতে নানান অসংগতি, অনিয়ম, পর্যান্ত সুযোগ সুবিধা ও দক্ষ জনবলের অভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও কাউন্সিল গঠনের কথা থাকলেও বিভিন্ন আইনি জটিলতার জন্য তা প্রণয়ন ও গঠন হয় নাই।

স্নাতকোত্তর শিক্ষার সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। সেই সাথে গবেষণার সুযোগের অভাবে  সম্ভাবনাময় এই চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করে জনগণের নিকট সুফল পৌছে দিতে পাচ্ছে না। পাশ করার পরে চিকিৎসকগণ সরকারি চাকরিতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাচ্ছেন এবং বেসরকারি প্রাক্টিসে অনেক মামলা, হামলা, হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যার ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা সেবা প্রদান।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * ৫ দফা দাবীতে হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ * হাসপাতাল শাট ডাউন ঘোষণা চলছে
সর্বশেষ সংবাদ