এক যুগে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হক
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কোটি কোটি টাকার রাস্তা ও ড্রেনের কাজে ঠিকাদাররা নিম্ন মানের কাজ করলেও নিজের কমিশন নিয়ে সহজেই বিল উত্তোলনে ঠিকাদারদের সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে এর আগেও এমন অভিযোগের সত্যতা থাকলেও চাকরি না হারিয়ে অফিস ম্যানেজ করে শুধু বদলি হয়েছেন। জনমনে প্রশ্ন নেপথ্যে এর রহস্য কি?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ময়মনসিংহ পৌরসভা থাকাকালীন ২০০১-২০০৯ পর্যন্ত বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হক উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পৌরসভায় চাকরিতে কর্মরত থাকাকালীন জহুরুল হকের সহযোগিতায় ঠিকাদার মুসা কামালের লাইসেন্সে একই কাজের পাঁচবার বিল উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরবর্তীতে এ অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন হলে সে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয় এবং পরবর্তীতে লঘু দন্ড দিয়ে জহুরুল হককে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে বদলি হলেও দীর্ঘ কয়েক বছর পর ২০১৮ সালে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন হওয়ার আগ মুহূর্তে আবারও তদবির করে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে যোগদান করেন ময়মনসিংহ পৌরসভায়। তবে স্বভাব যেন একটুও বদলায়নি। আবারো শুরু করেন তার কর্মযজ্ঞ। তিনি যোগদানের কিছুদিন পর সিটি কর্পোরেশন হওয়ায় তার ভাগ্য যেন খুলে যায়। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নিম্ন মানের কাজ করে শত শত কোটি টাকার বিল ভাউচার করেন। তবে এসব কাজ তদারকি না করেই ঠিকাদারদের কাছ থেকে বড় অংকের কমিশন নিয়ে সহজেই বিল উত্তোলনে ঠিকাদারদের সহযোগিতা করেছেন এবং ফাইলে সিগনেচার করেছেন। এভাবেই কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হক। তার প্রতারণার আরেক দৃশ্য সে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে চাকরিতে যোগদান করলেও তিনি পরিচয় দেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে আলোচনা । তার সহযোগী নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজহারুল হক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন অর রশিদ ও নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ সরকার এদের যোগসাজশে ঠিকাদারদের সমন্বয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যা গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করলেই সকল তথ্য বেরিয়ে আসবে। তার নামে বেনাম অসংখ্য ফ্ল্যাটও রয়েছে। তার এত টাকার উৎস কি? এ নিয়ে চলছে জনমনে ব্যাপক কোতুহল এবং আলোচনা।
সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় উন্নয়ন চাহিদা বিবেচনায় সরকার ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর বিশেষ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। ‘ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। যার ৩০% কাজ সম্পন্ন হলেও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়নি।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৭৫ কিলোমিটার সড়ক, ৩৪৫ কিলোমিটার নালা (ড্রেন) ও প্রায় ১৭ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করার কথা। প্রকল্পের আওতায় আরও রয়েছে ৩৭ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল ও ১ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়ক বিভাজক, ৩টি সেতু, ১৩টি কালভার্ট ও ৬টি পদচারী–সেতু নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এসব প্রকল্পেরও অধিকাংশ টাকা কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হককে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।