শেরপুরের সোমেশ্বরী নদীর ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন
শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী সোমেশ্বরী নদীতে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে। নির্বিচারে ড্রেজার মেশিনে নদীর পাড় কেটে অবাধে বালু উত্তোলনে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ খাড়ামুড়া গ্রাম বর্ষায় নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা।
রাস্তাঘাট ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে গেছে । এতে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। উপজেলা ভুমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সোমেশ্বরী নদীর ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকোচা মৌজায় ৭, ২৭ একর এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ টেন্ডারের মাধ্যমে একবছরের জন্য বালু উত্তোলনের অনুমতি লাভ করে শ্রীবরদী উপজেলার সামীম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আক্তার হোসেন।
তবে সামীম, আল আমিনসহ আরো কয়েকজন শেয়ারদার বালু উত্তোলন ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। জানা গেছে, আল আমীনের বাড়ি শ্রীবরদীতে। তিনি পুলিশ হেটকোয়াটে চাকরি করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তার পিতা সুলতান আলমের নামে বালু মহাল ইজারা নিয়ে তিনি চাকরির পাশাপাশি বালুর ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টারে চাকরির সুবাদে তিনি বালু উত্তোলনের নিতীমালা উপেক্ষা করে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আল আমিন।
বালিজুরি গ্রামের সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রহিম,তাওয়াকোচা গ্রামের ইউপি সদস্য রহমত আলীসহ আরো অনেকেই জানান, ইজারাকৃত এলাকার নদীতে বালু নেই।
ফলে ইজারাদারের লোকজন লিজ এলাকার বাইরে থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করে আসছেন। অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, লিজ এলাকার বাইরে বালিজুরি, খাড়ামুড়া, রাঙ্গাজানসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে। দিনেরাতে এসব ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু ।
অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সরকার পতনের পর থেকে সোমেশ্বরী নদীতে বালু উত্তোলনের নিতিমালা ভঙ্গ করে শুরু হয় বালু লুটপাটের মহোৎসব।
অভিযোগে প্রকাশ,বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ পর্যন্ত খুলতে সাহস পান না। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে পুঁজি করে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে।
খাড়ামুড়া ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বসানো হয়েছে ড্রেজার মেশিন। বালুদস্যুদের ড্রেজার মেশিনের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে সোমেশ্বরী নদীও নদীর দু’পার। এসব ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের পর ট্রাক ও মাহিন্দ্র যোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিট্রাক বালু ৩৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতিদিন ৪০/৫০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রনকারিরা প্রতিট্রাক বালু থেকে ৮ হাজার টাকা করে রাজস্ব আদায় করে আসছেন। অবাধে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের কারনে নদীর দু’পাশের রাস্তাঘাট দেবে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
তাওয়াকোচা এলাকায় বালুর ট্রাকের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে একটি ঘর ভাড়া নেয়া হয়েছে। এ ঘরে বসে নেয়া হচ্ছে বালুর ট্রাকের রাজস্ব। তাওয়াকোচা ও বালিজুরি বাজারসহ আশপাশের এলাকায় জনগণের চলাচলের রাস্তার উপর স্তুপ করে রাখা হয়েছে বালু।
এতে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এভাবে প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু । শুধু তাই নয় নদীর আশাপাশের এলাকায় বনের জমিতে গভীর গর্ত করে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। পাড় কেটে অবাধে বালু লুটপাটের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে প্রতিবছর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে।
অবাধে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের কারনে নদীর দু’পাশের রাস্তাগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে ।
বর্তমানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে শুধু তাওয়াকোচা মৌজায় ৭ একর এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বালু উত্তোলনের সাথে জরিত ইজারাদার সামীম আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি দাবি করছেন খাড়ামুড়া, রাঙা জান ও বালিজুরি মৌজা থেকে ও বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এসব বালু লুটপাটের বিষয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ও করা হয়েছে। কিন্তু সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু লুটপাট বন্ধ হয়নি। অবস্থা দেখে মনে হয়, এসব দেখার যেন কেউ নেই।
শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মনিরুল হাসান বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বলা আছে।
তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে কথা হলেও এ বিষয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহমেদ বলেন, লিজ এলাকার বাইরে থেকে বালু লুটপাটের বিষয়টি তাদের জানা আছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল ও একই কথা বলেছেন।