বিশ্বম্ভরপুরের মাঝাইর গ্রামে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা বিপত্তি, র্দূভোগে গ্রামবাসী

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জের বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নে গত পহেলা জুন একটি সংখ্যালঘুর ফলন্ত ৭টি কাটাল গাছ কেটে ফেলেছেন ২নং পলাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মাঝাইর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সোহেল মিয়া । এমন অভিযোগ এনে চেয়াম্যানের বিরুদ্ধে গত ৫ই জুন সিলেটের দৈনিক শুভ প্রতিদিন পত্রিকায় এমন শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই
সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে ঘটনার দিন মাঝাই গ্রামের মৃত রামকৃষ্ণ দাসের ছেলে পলাশ ইউপি আওয়ামী লীগের রামেন্দ্র কুমার দাস ও তার সহোদর সজ্ঞয় কুমার দাস গাছ কাটতে বাধাঁ দিলে চেয়ারম্যান ও তার লাটিয়াল বাহিনী সংখ্যালঘু দুই সহোদরকে মারপিঠ করে আহত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা হয় মাঝাইর গ্রামের একাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃত ঠাকুর মণি দাসের ছেলে তাপশ দাস,সাবেক ইউপি সদস্য, মৃত মনোরঞ্জন দাসের ছেলে রতন চন্দ্র দাস, মৃত বণমালী দাসের ছেলে প্রমোদ দাস এবং পার্শ্ববর্তী বাজিতপুর গ্রামের অবিমান্য দেবনাথের ছেলে অবণী দেবনাথ, ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল মিয়ার দুই সহোদর তারেক আহমদ ও মোঃ মাসুক মিয়া এবং সহ অনেকেই সাথে। তারা জানান, এই মাঝাইর গ্রামের অলিগলি সবখানের কাচা রাস্তা। তাই মাঝার গ্রামের সোহেল মিয়া চেয়ারম্যান হিসেবে সরকার থেকে একটি প্রকল্প গ্রহন করে গ্রামের কাচা রাস্তাটিকে পাকাকরণের পাশাপাশি পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা করত্যে গ্রামের লোকজনকে নিয়ে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করেন।

এতে গ্রামের দলমত নিবির্শেষে সবার সর্বসম্মতিক্রমে রাস্তার কাজটি শুরু করে রাস্তার পাশে সরকারী গাছগুলো যেগুলো রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেই সমস্ত গাছগুলো প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কেটে রাস্তার কাজ শুরু করার আহবান জানানো হয়। গত ১ ও ২ জুন স্থানীয় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্ভেয়ার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিল্পী রানী মোদক ঘটনাস্থলে এসে রাস্তাটি সার্ভে করেন এবং যে সমস্ত সরকারী জায়গাতে রোপনকৃত গাছগুলো রাস্তা তৈরীতে সমস্যা হচ্ছে সেই সমস্ত গাছগুলো কেটে ফেলার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সার্ভে অনুযায়ী চেয়ারম্যান সোহেল মিয়া গ্রামবাসীর স্বার্থে কয়েকটি কাঠাল গাছ রাস্তায় পড়ে যায় সেই সুবাদে রামেন্দ্র কুমার দাসের বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে কয়েকটি কাঠাল গাছের কারণে রাস্তাটির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি মর্মে রাস্তার পাশে ৭টি কাঠাল গাছ প্রশাসনকে অবহিত করে গাছ কাটার উদ্যোগ নিলে রামেন্দ্র কুমার দাস এসে বাধাঁ প্রদান করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে আসনে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সহকারী কমিশণার (ভূমি) শিল্পী রানী মোদক। এ সময় রামেন্দ্র কুমার দাসের ছোটভাই সঞ্জয় কুমার দাস চেয়ারম্যান সোহেল মিয়ার সাথে গাছ কাটা নিয়ে কথা কাটাাকটির এক পর্যায়ে সঞ্জয় দাস চেয়ারম্যান সোহেল মিয়াকে একটি ধাক্কা দিলে চেয়ারম্যান এ সময় সঞ্জয় কুমার দাসকে পেঠে লাথি মেরে দেন।

এ সময় সহকারী কমিশনার উভয়পক্ষকে আইন মেনে শান্ত হওয়ার পরামর্শ দিলে কেহই তার কথা না শুনে উভয়পক্ষের লোকজন মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় রামেন্দ্র কুমার দাসের মাথা ফেটে যায় এবং তার ভাই সঞ্জয় কুমার দাসও আহত হন। সাথে সাথে রামেন্দ্র কুমার দাস ও সঞ্জয় কুমার দাসকে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। এই ঘটনার পর পরই গ্রাম্য সালিশের লোকজন একত্রিত হয়ে উভয়পক্ষকে সালিশে উপস্থিত থাকার আহবান জানালে ও চেয়ারম্যান ও লোকজন সাািলশ বৈঠকে উপস্থিত থাকলে রামেন্দ্র কুমার দাস গংরা গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে উপস্থিত না হয়ে তিনি নিজে বাদি হয়ে আমল গ্রহনকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিশ^ম্ভরপুর জোনে চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল মিয়া ও তার সহোদর মাছুম মিয়াকে আসামী করে সি আর মোকদ্দমা দায়ের করেন। যার সি আর মোকদ্দমা নং-১৪৫/২০২৪ইং।

এ ব্যাপারে মামলার বাদি রামেন্দ্র কুমার দাস জানান,সোহেল মিয়া আমার বাড়ির সামনে আমার লাগানো ফলন্ত সাতটি কাঠাল গাছ কাটার সময় আমরা বাধাঁ দিলে সোহেল ও তার লোকজন আমি ও তার ভাই সঞ্জয়ের উপর হামলা চালিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং আমার ভাই সঞ্জয়কে পিঠিয়ে আহত করে। তিনি এর সুষ্টু বিচার প্রার্থনা করেছেন।

এ ব্যাপারে মামলার বিবাদি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল মিয়া জানান,আমাদের এই মাঝাইর গ্রামটির শতকরা ৯৯ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন,এই গ্রামের সবাই আমার আপনজন এবং সবার ভোটে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। যখন দেখলাম আমাদের এই পুরো গ্রামটিতে পাকা কোন রাস্তা না থাকার কারণে বর্ষা এবং বৃষ্টির মৌসুমে কাচা রাস্তাগুলোতে পানি জমে চলাচলে অনুপযোগি হয়ে যায়। তখনই এই রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য সরকার থেকে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। কাজ শুরুর আগে আমাদের গ্রামের সকল মুরুব্বীদের নিয়ে পরামর্শ ও মতামত করে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এনে রোডম্যাপ ও সার্ভে করে রাস্তার কাজ শুরু করার আগে রাস্তার পাশে সরকারী গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নিয়ে কিছু ঠেলাঠেলির ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) শিল্পী রানী মোদক বলেন যে কাঠাল গাছগুলো রামেন্দ্র কুমার দাস নিজেদের দাবী করছেন এটা সঠিক না। এই রাস্তার পাশের গাছগুলো হচ্ছে সরকারী জায়গাতে। তবে এখানে চেয়ারম্যান সোহেল মিয়া রামেন্দ্র কুমার দাসের ভাই সঞ্জয় কুমরার দাসের পেঠে লাথি মেরে দিলে উভয়ের মধ্যে কিছু মারামারি ঘটনা ঘটে বলেও তিনি জানান।

এ ব্যাপারে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মফিজুর রহমান মাঝাইর গ্রামে উন্নয়ন প্রকল্পের কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আদালতে মামলা রয়েছেন সেই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি নন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ