বিস্ময়কর পিতাপুত্রের টাকা পাচার কান্ড!
রপ্তানি ও আমদানির নামে ২৫৫ কোটি ডলার এখন পর্যন্ত দেশে আসেনি বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। এ অর্থের বড় অংশ একাধিক কোম্পানির বিনিয়োগকারী পিতাপুত্র সম্মিলিতভাবে পাচার করেছেন। দেশে পিতার কোম্পানি থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে বিদেশে পুত্রের কোম্পানিতে। একইভাবে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির জন্য দেশ থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে পুত্রের কোম্পানিতে। কিন্তু টাকা বা পণ্য কোনোটাই দেশে আসেনি। এসবের সঙ্গে জড়িত ৪৫ জন উদ্যোক্তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। রপ্তানি আয় দেশে আনেনি-এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকা ধরে সিআইডি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
এই কাজে প্রথমেই নাম এসেছে বেক্সিমকো গ্রুপের। দেশ থেকে বেক্সিমকো গ্রুপটির যে কোম্পানির পণ্য রপ্তানি করা হতো, এর মালিক সালমান এফ রহমান। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের যে কোম্পানিতে পণ্য রপ্তানি করা হতো, তার মালিক সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান। অর্থাৎ বাংলাদেশে পিতার মালিকানাধীন কোম্পানিতে উৎপাদিত পণ্য লন্ডনে ছেলের মালিকানাধীন কোম্পানিতে রপ্তানি করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় যেসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলোর মূল্য দেশে আসেনি। এভাবে পাচারের ক্ষেত্রে অর্থের পরিমাণ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে প্রায় আট কোটি ডলার। গ্রুপটি এভাবে টেক্সটাইল সামগ্রী ও ফার্মা সামগ্রী রপ্তানির মাধ্যমেই বেশির ভাগ অর্থ পাচার করেছে। প্রাথমিকভাবে যা শনাক্ত হয়েছে, এর পরিমাণই প্রায় হাজার কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমেই গ্রুপটি মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার করেছে। এছাড়া এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক থেকেও অর্থ পাচার করা হয়েছে।
প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির যদি দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকে, তাহলে বিদেশে কোনো সম্পদ থাকলে সে তথ্যও আয়কর রিটার্নে দেখাতে হয়। আর দেশে যে সম্পদ থাকবে, সেগুলোর তথ্য তো রিটার্নে দেখাতেই হবে। বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান আয়কর রিটার্নে লন্ডনে কোম্পানি থাকার কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। বিদেশে নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে পণ্য রপ্তানি করলে সে তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জানাতে হবে। কিন্তু ব্যাংককে এসব তথ্য জানানো হয়নি বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। তথ্য গোপন করে এভাবে পণ্য রপ্তানি ও পণ্যমূল্য দেশে না আনা-দুটোই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।
বাংলাদেশের আরও বড় শিল্পগ্রুপের মালিক এবং তার ছেলে এ প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচারে জড়িত। হংকংয়ে তাদের আরেকটি কোম্পানি আছে। যার মালিক একই গ্রুপের মালিকের ছেলে। অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও পিতা বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির করেছেন ছেলের মালিকানাধীন কোম্পানির কাছে। কিন্তু রপ্তানি পণ্যের সব মূল্য দেশে আনা হয়নি। এক্ষেত্রেও রপ্তানির আড়ালে দেশ থেকে টাকা পাচার করা হয়েছে।
এমন আরও কয়েকটি শিল্পগ্রুপ ও কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা দেশ থেকে টাকা পাচার করে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রুপের নামে কোম্পানি গঠন করেছেন। ওই কোম্পানিতে দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করে রপ্তানির মূল্য দেশে আনছেন না। তারা ওইসব অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন।
বিসমিল্লাহ গ্রুপ প্রায় ১২০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেও মূল্য দেশে আনেনি। ওইসব টাকা তারা পাচার করে দিয়েছে বিদেশে। ক্রিসেন্ট গ্রুপ জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে লেদার ও লেদার সামগ্রী রপ্তানি করে মূল্য দেশে আনেনি। এমন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রপ্তানির মূল্য তামাদি হয়ে পড়েছে। এগুলো দেশে আনার কোনো উদ্যোগ নেই। এস আলম গ্রুপের রপ্তানি আয়ের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তবে তাদের গ্রুপ থেকে পণ্য রপ্তানি কম, আমদানি বেশি। আকিজ গ্রুপ পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেও ২০০ কোটি টাকার আয় দেশে আনেনি।