এখনও হবিগঞ্জে অস্ত্র জমা দেননি অনেকেই
আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে হবিগঞ্জ জেলায় ৩৪৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। এর মধ্যে ৩০৮টি অস্ত্রের লাইসেসন্সধারী হলেন- বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে আছে ৩৬টি লাইসেন্স। গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেগুলো জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। তবে নির্ধারিত সময়ে হবিগঞ্জ জেলায় ৫২ জন অস্ত্রধারী তাদের অস্ত্র জমা দেননি।
যদিও জেলা প্রশাসন বলছে, এর মধ্যে ৮ জন লাইসেন্স নিলেও অস্ত্র ক্রয় করেননি। প্রশাসনের হিসেবে এখনও ৩৪ জন ব্যক্তি সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দেননি। তবে কারা অস্ত্র জমা দেননি সেই তথ্য দিতে রাজি নয় হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। তবে এই অস্ত্রগুলো কার হাতে রয়েছে, কি অবস্থায় রয়েছে সেটিও নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। একটি দ্বায়িত্বশীল সূত্র বলছে, অস্ত্র কিনলেও যে ৩৪ জন জমা দেননি তাদের মধ্যে অধিকাংশই সদ্য ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী। তবে আত্মগোপনে থাকায় নাকি ইচ্ছে করেই এসব অস্ত্র জমা দেননি তারা, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে।
মূলত, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সূত্রটি বলছি, যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার এসব অস্ত্রেও লাইসেন্স দিয়েছে, সেহেতু ভিন্ন মতের রাজনীতিকদের হাতে অস্ত্র থাকার কথা নয়। তবে জেলায় এতোগুলো আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স থাকলে ব্যক্তি পর্যায়ে সেগুলোর খুব একটা ব্যবহার দেখা যায়নি। শুধুমাত্র বছরখানেক আগে ব্যক্তিগত দ্ব বানিয়াচংয়ের আওয়ামী লীগ নেতা ধন মিয়ার হাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এ সময় তিনি প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্য করে তার অস্ত্র থেকে গুলি ছুঁড়েছিলেন।
বিগত সময়ে জেলায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে যতগুলো সংঘাত হয়েছে তাতেও এসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যায়নি। তবে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে যায়। এমনকি সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপরও গুলি ছুঁড়েছিন আওয়ামী লীগ নেতারা।
গত ৪ আগষ্ট সংঘর্ষে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি ছুঁড়েন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নেওয়াজ। আওয়ামী লীগের কোন পদে না থাকলেও অদৃশ্য হাতের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নানা অপকর্ম করেছেন প্রবাসী এই অপরাধী। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত্যিও পর আত্মগোপনে রয়েছেন তিনিও। প্রবাসী শাহ নেওয়াজ যে অন্দ্র থেকে গুলি ছুঁড়েছেন, সেটি বৈধ নাকি অবৈধ তা জানা যায়নি।
সূত্র বলছে, শাহ নেওয়াজের হাতে থানা এই অস্ত্রটি অবৈধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার কিংবা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকলেও বছরের অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করেছেন। সেই হিসেবে তার অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এর বাইরেও জেলায় বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। যে অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় ডাকাতিসহ নানা অপকর্ম সংগঠিত হয়েছে ।
এদিকে, সরকার পতনের দিন বানিয়াচং থানা থেকে পুলিশের ১৩টি অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত ১১টি অস্ত্র জমা হলেও ২টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। রাজনৈতিক এই অস্থিরতার মূহূর্তে এসব অস্ত্র নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে, অস্ত্র উদ্ধারে সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিয়ান শুরু হলেও হবিগঞ্জে এখন শুরু হয়নি। সম্প্রতি হবিগঞ্জের নবাগত পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান সাংবাদিকদের জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে বৈধ-অবৈধ আস্ত্রের বিষয়ে খোজ-খবর নিচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই অভিযান শুরু করবে।