বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, শুল্ক কমলেও প্রভাব নেই বাজারে
আমদানি শুল্ক কমানোর পর বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমার পরিবর্তে উলটো বেড়েছে। গত ২ দিনে পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এই দুই পণ্যের দাম প্রতি কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে ১২০ থেকে ১২২ টাকার কমে মিলছে না পেঁয়াজ। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চাল, মুরগি ও ডিমের দাম। এদিকে ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও বাজারে দাম অনেক চড়া। ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে দেশে হুহু করে করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চট্টগ্রামে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে দিন দিন অস্থির হয়ে পড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও এ দামে বিক্রি হচ্ছে না। বেশিরভাগ পণ্যই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
আলু ও পেঁয়াজের বাজারমূল্য সহনশীল পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে ৬ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের কীটনাশক আমদানিতেও শুল্ক কমানো হয়েছে। এ নিয়ে পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা বলবৎ থাকবে। আলু আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগে পণ্যটির ওপর প্রযোজ্য ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া আমদানি পর্যায়ে পেঁয়াজের ওপর ৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যদিকে কীটনাশকের ওপর প্রযোজ্য ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি সমুদয় রেগুলেটরি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের একাধিক আমদানিকারক জানান, সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও এর সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। ভারতীয় সীমান্তে ১০ তারিখের আগে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৯৫ থেকে ৯৭ টাকায়। বুধবার থেকে এখন ওই সব বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০২ থেকে ১০৫ টাকায়। এসব শুল্ক, পরিবহণ খরচ, শ্রমিকসহ বিভিন্ন খরচ বাবদ আরও ৫-৭ টাকা খরচ রয়েছে। খুচরা পর্যায়ে এ পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১২২ টাকায়। মানভেদে ৫ টাকা কমবেশি রয়েছে। এখন পাকিস্তান ও চায়না থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ৯৭ টাকার বেশি দামে। যা আগে ছিল ৯০ টাকার কমে। খুচরা বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১১০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে মানভেদে ৫ টাকা কম-বেশি। পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকার বেশি দামে। আর বড় আকারের চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দামে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি ১০৫ টাকার বেশি দরে।
আলু আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেও দামে কোনো প্রভাব নেই। আগের মতোই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। কিছু দোকানে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের আড়তদারদের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গের আলু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ কারণে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে অস্থির চালের বাজার। দেড় মাস আগে বেড়ে যাওয়া বাজারে দর কমার কোনো লক্ষণ নেই। গত সপ্তাহের মতোই মোটা চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে সরু চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৭৮ টাকা দরে। মাস দেড়েক আগে মোটা চাল ৫০ থেকে ৫৩ ও মাঝারি চালের কেজি ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর সরু চালের কেজি ছিল ৬২ থেকে ৭৫ টাকা।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের বৃহত্তর পাইকারি মার্কেট হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস যুগান্তরকে বলেন, ‘ভারতে ৩ দিন আগে আবারও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এ কারণে সরকার আমদানি শুল্ক কমানোর পরও পেঁয়াজের দাম কমছে না। ভারতের সীমান্তের হাটগুলোতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজিপ্রতি ৫ টাকার বেশি বেড়েছে। এ কারণে দেশে পেঁয়াজের দাম কমছে না।’
বাজারদর : বন্যার কারণে চট্টগ্রামে এখনও স্বাভাবিক হয়নি সবজির বাজার। চিচিঙ্গা ৬০-৭০, ঝিঙে ৬০-৭০, বেগুন ৮০-১০০, টমেটো ১০০ এবং পেঁপে ৪০-৫০ টাকা কেজি, লাউ ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা ও ধনেপাতা ২০০ থেকে বেড়ে ২৩০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পেঁপে ১০ টাকা কমে ৫০ টাকা, কাঁকরোলে ১০ টাকা কমে ৯০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১০ টাকা কমে ৫০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৯০-২০০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকার নিচে মিলছে না শাকের আঁটি। রসুন ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
হিলিতে কমেছে আলু ও পেঁয়াজের দাম : যুগান্তরের হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে আলু ও সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমেছে। কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা কমেছে আলুর দাম। বর্তমানে বড় জাতের আলু ৪ টাকা কমে ৪৬ টাকা এবং ছোট জাতের আলু ৫ টাকা কমে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কমেছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে ১১০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুল্ক কমানোর কারণে দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, গত সপ্তাহে ভারত থেকে প্রায় ১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে।